শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। এসব কোচিংয়ের বেশিরভাগই সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত। ঠাকুরগাঁও জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা এসব কোচিং বন্ধে প্রশাসনিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে কোচিংগুলো পরিচালনা করেন বিভিন্ন নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। রাণীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও পিছিয়ে নেই। কেউ সাইন বোর্ড, ব্যানার ঝুলিয়ে কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন আর কেউ চালাচ্ছেন নামের জোড়ে। ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোচিং বাণিজ্যের এসব চিত্র।
সম্প্রতি কোচিং বাণিজ্য বন্ধের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলার প্রতিটি দপ্তরে গত ৫ মাস আগে কোচিংয়ের বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাণীশংকৈলের কোচিং সেন্টারগুলোর তথ্য। অগ্নিশিখা কোচিং সেন্টার, স্টার কোচিং সেন্টার, সবুজ সাইন্স কর্ণার, রেজাউল ইংলিশ টিচিং, সফিউল্লা প্রাইভেট টিচিং, পারভেজ ইংলিশ টিচিং সেন্টার, দুর্বার কোচিং সেন্টার, শাহানশাহ ইকবাল প্রাইভেট টিচিং, আলমাস প্রাইভেট টিচিং সেন্টার, উদয়ন কোচিং সেন্টার, কবির কোচিং সেন্টার, বুলু ইংলিশ টিচিং হোম, অর্ঘ্য কোচিং সেন্টার, সাকসেস কোচিং সেন্টার, মুনসেফ প্রাইভেট সেন্টারসহ নামে-বেনামে চলছে এসব কোচিং। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাণীশংকৈল পৌরশহরে চল্লিশটির বেশি কোচিং সেন্টার নিজে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো পরিচালনা করছেন শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। সম্প্রতি পৌরশহরের এক কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় হলরুমের মতো একটি কক্ষে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে কোচিং। আর সেই কোচিংয়ের সামনে অপেক্ষারত অভিভাবকরা।
এসময় এক অভিভাবকের দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, স্কুল-কলেজগুলোতে নিয়মিতভাবে পড়াশোনা না হওয়ায় ও শিক্ষকদের প্ররোচনায় অনেক শিক্ষার্থী কোচিং নির্ভর হয়ে পড়েছে। এ থেকে আমাদের পরিত্রাণ পাওয়া উচিৎ। এতে শুধু অভিভাবকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে না, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরাও। নানা রকম খেলাধুলা থেকে তাদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে অতিরিক্ত কোচিং ক্লাসের কারণে। অভিভাবকদের জন্যও যা অতিরিক্ত চাপ।
এসময় বেশ কয়েকজন অভিভাবক আক্ষেপের সাথে বলেন, কোচিংয়ের অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি চাই। তারা আরও জানান, একেকটি কোচিং সেন্টার প্রতিজন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত চলছে কোচিং ক্লাস।
এ বিষয়ে একান্নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও দূর্বার কোচিং সেন্টারের পরিচালক বলেন, আমার কোচিং সেন্টারে দুই শিফটে ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়ছে।
এদিকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় বলা হয়, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল নম্বর, নাম ও শ্রেণি উল্লেখ করে জানাতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা নেয়া যাবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকরা এই নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষাগুরুরা।
এদিকে কোচিং বাণিজ্যের লোভে শহরমুখী হচ্ছেন গ্রামের ভালো শিক্ষকরা। তাই, জেলার গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো শিক্ষকের অভাবে অচল হয়ে যেতে বসেছে। তাদের সাথে সেই গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থীরা শহরমুখী হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মকসেদুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এর আগে মাসিক মিটিংয়ে আমি উপজেলার শিক্ষকদের কোচিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত না থাকার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু এখনো যারা জড়িত আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী শাহরিয়ার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উপজেলার সরকারি ও এমপিওভুক্ত যেসব শিক্ষক কোচিং চালাচ্ছেন তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।