ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ধর্ষণ মামলার আসামিদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ছাত্রলীগ নেতারা এই ঘোষণা দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আয়োজিত এ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখাগুলোর ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের দুই শতাধিক নেতা-কর্মীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “আজকে আমার বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিডিয়ার সামনে এসে বলছে, তার নিজ সংগঠনের ভাইয়েরা তাকে ধর্ষণ করেছে। ফেইসবুকে লাইভে এসে আমার বোনকে ... বলে প্রচারের ভয় দেখিয়েছে। মামলার পর তারা ধর্ষকের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে আবার বিক্ষোভ করেছে। কত বড় স্পর্ধা এদের! ছাত্রলীগ তাদের ছেড়ে দেবে না।”
ফেইসবুকে অপপ্রচার না করে ‘সাহস থাকলে সামনে আসার’ চ্যালেঞ্জ দিয়ে জয় বলেন, “ডাকসুর যত ভিপি আছে, সবার মর্যাদাহানী করেছে নুর। গুজব বাহিনী দ্বারা তিনি ডাকসুর ভিপি হয়েছিলেন। কিন্তু আজকে দেখা যাচ্ছে এই নাটকবাজ নুর সবাইকে ভুল বুঝিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। নুরু গংরা শিবিরদের নিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠন করেছে, কিসের ছাত্র অধিকার পরিষদ? অপনারা তো এখন দেখছি ধর্ষক অধিকার পরিষদ।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী গত ২১ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণ, অপহরণ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চরিত্রহননের অভিযোগে দুটি মামলা করেন।
সেখানে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়।
এর মধ্যে লালবাগের মামলায় পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে এবং কোতোয়ালির মামলায় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুর দুই মামলাতেই তিন নম্বর আসামি।
ঢাকার উপ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখানো নুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ‘একজন শীর্ষ নেতার পৃষ্ঠপোষকতায়’ ওই ‘মিথ্যা মামলা’ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর দায়ের করা মামলার পাশাপাশি সিলেট এমসি কলেজ, খাগড়াছড়ি ও সাভারের ধর্ষণের ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় ছাত্রলগীগের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে। প্রয়োজনে বিচারের জন্য ‘নতুন আইন প্রণয়ন ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের’ আহ্বান জানান সরকার সমর্থক এ ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
সংবাদ মাধ্যম ও সুশীল সমাজের সমালোচনা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “আামাদের মিডিয়া, তথাকথিত শিক্ষক, সুশীল সমাজ সিলেটে এমসি কলেজে ধর্ষক কে এটা দেখে, বার বার ছাত্রলীগকে দোষারোপ করে। ধর্ষকের তো কোনো দল নেই। সে যেই হোক, সে নিকৃষ্টতম প্রাণী, সে কুলাঙ্গার। তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।
“ড. কামাল হোসেন ধর্ষকদের বলে তাদের আইনি সহায়তা দেবেন। এ ধরনের লোকদের যারা আইনি সহায়তা দেয়, তাদেরকে বয়কট করতে হবে। আমি আইনের ছাত্র হিসেবে লজ্জিত, তারা নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। আমরা তো বিশ্বাস করি না। তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও কথা বলেন। এই নুরু গঙরা, ড. কামাল হোসেনরা রাষ্ট্রের শত্রু। তাদের এ দেশে থাকার কোনো অধিকার নাই। তাদেরকে বয়কটের এখন সময় এসেছে। আমরা এই ক্যাম্পাসে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।”
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জয় বলেন, “সারা বাংলাদেশের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বলতে চাই, যেখানেই ধর্ষণকারী পাবেন, তাদের আইন-শৃঙাখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। যেখানেই জামায়াত-শিবির পাওয়া যবে, সেখানে আমরা তাদের প্রতিহত করব। যত ধরনের ধর্ষক আছে, তাদের আমরা বয়কট করছি। তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, গণধোলাই দিয়ে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমারা বলতে চাই, অবিলম্বে নুরু গংদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনুন।”
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, “ইতিহাসে প্রথমবারের মত এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষকের পক্ষে তারা বিক্ষোভ করেছে। তারা ধর্ষকের বিচারকে বানচাল করতে আন্দোলনে নেমেছ, রাজপথে মোকাবেলার হুমকি দিয়েছে। তারা এটাকে সরকার ও ছাত্রলীগের ষড়যন্ত্র বলছে, অথচ এই মামলা করেছে তাদেরই সংগঠনের কর্মী। যে কর্মী তাদের লড়াই-আন্দোলনে রান্না করে খাইয়েছে। সেই ছাত্রী বোনকে তারা ধর্ষণ করেছে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে থাকবে।”
তিনি বলেন, “ধর্ষণ তো দূরের কথা, কেউ নারী সমাজের প্রতি বিন্দুমাত্র আড়চোখে তাকানোর সাহস করে, এমন কোনো কর্মী বাংলাদেশ ছাত্রলীগে নেই। সিলেটের এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনায় সবার আগে কে আন্দোলন করেছে? সবার আগে ছাত্রলীগ সেখানে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ধর্ষকদের বিচার না হবে, তারা কিন্তু আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, “দেশনেত্রী শেখ হাসিনা যখন উন্নয়নের মাধ্যমে, নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখন দেখছি ধর্ষণের এই মেগা সিরিয়াল। আমি হতবাক, যখন একটি ধর্ষণের বিচার হবে, তখন পর পর কীভাবে এত ধর্ষণের ঘঠনা ঘটছে। আমার তো মনে হয় নুরুরা নিজেরা বাঁচার তাগিদে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে দায়ী করতে চায়।”
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে উদ্দেশ করে সনজিত বলেন, “আপনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আপনি বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন, আমি নাকি এই ঘটনার সাথে লিপ্ত। আপনি একটা পাগল, আপনি মানসিক বিকারগ্রস্ত। আপনার মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর ধর্ষণের বিচারের জন্য যদি আমি মামলা করতে পারতাম, আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতাম।”
সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, "গণমাধ্যমের কর্মীদের আমি বলতে চাই, আপনারা সিলেক্টিভ নৈতিকতা না দেখিয়ে, আপনার নৈর্ব্যত্তিক নৈতিকতা দেখান। সিলেট এমসি কলেজের ঘটনা পত্রিকার লিড হবে, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা নিম্নভাবে উপস্থাপন হবে, তা কেন? বিষয়টি আপনার ভেবে দেখবেন।ডাকসুর ভিপি নাটকবাজ নূর একেক সময় একেক কথা বলছে। তারা কথায় কোনা হিসাব মিলছে না।গণমাধ্যমের কাছে অনুরোধ সব ঘটনা যেন সমান গুরুত্ব পায়।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তম শিকদার সমাবেশে বলেন, “একজন ধর্ষকের পরিচয় সে ধর্ষক। তার কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ধর্ষণের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এটা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। নুরদের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ, তখন সুশীলদের প্রতিবাদের ভাষা নমনীয় হয়ে যায়। সুশীলরা আবার ছাত্রলীগের বেলায় জেগে ওঠে। এমসি কলেজে সুশীলরা কিন্তু ধর্ষক খোঁজে না, খোঁজে ছাত্রলীগ।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগের পাশাপাশি খাগড়াছড়িতে এক প্রতিবন্ধী পাহাড়ি নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণ, সিলেট এমসি কলেজে স্বামীর সাথে বেড়াতে যাওয়া নারীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেন ডাকসুর সাবেক সদস্য তানভীর হাসান। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যৃদণ্ডের দাবি জানানো হয় তাদের সমাবেশ থেকে।