নুসরাত হত্যা: কাদেরের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি - দৈনিকশিক্ষা

নুসরাত হত্যা: কাদেরের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি

ফেনী প্রতিনিধি |

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি ও মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন হাফেজ আব্দুল কাদের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে চার জন ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিলেন।

একই দিন গ্রেফতারকৃত মো. শামীম নামে এক আসামিকে পাঁচ দিন রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত দলের প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি, মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) এস এম রুহুল আমিন বলেছেন, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির অনেকে এ ঘটনায় জড়িত।

কাদেরের জবানবন্দি: ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম শরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালতে কাদের জবানবন্দি দেন।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ফেনী পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা কাদেরকে আদালতে নিয়ে যান। এ সময় ঘণ্টাব্যাপী আদালতে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে খোশগল্প করে সময় কাটান তিনি। তাকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। বিকেল ৪টার দিকে তাকে বিচারকের খাস কামরায় নিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।

আদালত সূত্র জানায়, বিচারকের খাস কামরায় প্রবেশের পর প্রায় এক ঘণ্টা পর্যন্ত কাদের জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তিনি জবানবন্দি দিতে রাজি হন।

মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ও ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কাদেরকে বুধবার রাজধানীর মিরপুরের ৬০ ফুট সড়কসংলগ্ন ছাপরা মসজিদ এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

পিবিআই সূত্র জানায়, ঘটনার আগের রাতে মাদরাসার একটি কক্ষে নুসরাত হত্যার পরিকল্পনা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কাদের। ঘটনার দিন তার দায়িত্ব পড়ে গেটে পাহারা দেওয়ার। ওই দিন নুসরাতের ভাই নোমান বোনকে পরীক্ষার হলে এগিয়ে দিতে গেলে কাদের তাকে বাধা দেন এবং ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। ঘটনার পর এক দিন তিনি এলাকায় থাকলেও পরে ঢাকায় পালিয়ে যান। তিনি নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত বলে এর আগে নুর উদ্দিন, শামীম ও শরীফের জবানবন্দিতে উঠে আসে বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম।

পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল গতকাল রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, নুসরাত হত্যার পরিকল্পনা বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন তাদের নামও কাদের জানিয়েছেন। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় জানাতে রাজি হননি তিনি।

পাঁচ দিনের রিমান্ডে শামীম: গতকাল দুপুরে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম শরাফ উদ্দিন আহম্মেদ এ আদেশ দেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় শামীমকে আদালতে সোপর্দ করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত সোমবার বিকেলে শামীমকে সোনাগাজী উপজেলার পশ্চিম তুলাতলি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাবার নাম শফিউল্যাহ। তিনি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির অনেকে জড়িত: পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো তদন্তদল দুই দিন ধরে সোনাগাজীতে কাজ করছে। আজ শুক্রবার ফেনীতে অবস্থান করবে দলটি। গতকালও দলটি সোনাগাজীতে নুসরাতের পরিবার, মাদরাসার শিক্ষকসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেছে। বিকেলে তদন্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান দলের প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি, মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) এস এম রুহুল আমিন।

ডিআইজি রুহুল আমিন বলেন, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটি যদি ২৭ মার্চের ঘটনার পর যথাযথ ব্যবস্থা নিত তাহলে ৬ এপ্রিলের নির্মম ঘটনাটি এড়ানো যেত। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, যে-ই জড়িত থাকুক না কেন এবং সেই ব্যক্তিরা যত বড় ক্ষমতাধর হোক না কেন, তাদের সবার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ অনেক আগে থেকেই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে। তার সমর্থকরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত বলে তারা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন।

সোনাগাজী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করা ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিষয়ে তদন্ত দলের প্রধান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় ওসির গাফিলতি ছিল বলেই তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা আরও বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’

ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইজি রুহুল আমিন বলেন, ‘তদন্তের পরে আমরা বলতে পারব। এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।’ তদন্তদলের প্রধান জানান, তারা আজ ফেনীতে কাজ করার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তার মায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয় অধ্যক্ষ সিরাজকে। মামলাটি তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। জেলে বসে সিরাজ এ হামলার নির্দেশ দেন এবং তার অনুগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরিকল্পনা করে এ হামলা চালায় বলে তদন্তে জানা গেছে। গত ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু হয়।

‘আর যেন কেউ রাফি না হয়’: সোনাগাজীতে গতকাল সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) আয়োজিত গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নুসরাত জাহান রাফির ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেছে, ‘আর যেন কেউ রাফি না হয়’। বোন হারানোর শোকে কাতর রায়হান এর বেশি কিছু বলতে বা লিখতে পারেনি। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অনেকেই চোখের পানিতে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সুজন সোনাগাজী শাখা আয়োজিত কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু তাহের ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম রাসেল প্রমুখ।

একই দাবিতে সোনাগাজীর ওলামাবাজার হাজি সেকান্দর মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা দুপুরে চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ওলামাবাজারে মানববন্ধন, প্রতিবাদসভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বাবুলের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান মামুন, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাজমুল হাসান প্রমুখ।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041890144348145