ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় মাদরাসার প্রভাষক ও পরীক্ষা হল পরিদর্শক আবুল খায়ের তাঁর সাক্ষ্যে বলেছেন, আসামি উম্মে সুলতানা পপি ঘটনার দিন দেরিতে হলে আসে। সে সময় তাকে আতঙ্কিত ও বিষণ্ন দেখাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মামুনুর রশিদ মামলার ১৩ নম্বর সাক্ষী আবুল খায়েরের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। পরে তাঁকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রাখা হয়েছে আগামী ১৪ জুলাই। ওই দিন আরও দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে গত বুধবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারকে ওই দিন রাতেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে প্রভাষক আবুল খায়ের বলেন, ‘গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা চলাকালে আমি মাদরাসার ভেতর ৯ নম্বর হলে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। ওই কক্ষে ২৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। আমি সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে কক্ষে প্রবেশ করে খাতা বিলির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর খাতা দিতে গিয়ে দেখি তিনজন পরীক্ষার্থী তখনো আসেনি। তাদের মধ্যে দুজন কিছুক্ষণ পর হলে আসে। তাদেরও খাতা প্রদান করি। আরও কিছুক্ষণ পর আসে আরেকজন। নাম জানতে চাইলে বলে—আমি উম্মে সুলতানা পপি। আমি বলি, এত দেরি করলে কেন? সে বলে—স্যার, আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম। পরে তাকেও খাতা দেয়া হয়। এ সময় তাকে আতঙ্কিত ও বিষণ্ন দেখাচ্ছিল।’
আবুল খায়ের আরও বলেন, ‘দুই দিন পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে ও শিক্ষার্থীদের কাছে ঘটনা জানতে পারি।’
পরে প্রভাষক খায়েরকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান ও আহসান কবির বেঙ্গলসহ কয়েকজন আইনজীবী। আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী জানতে চান, ‘পপি ঠিক কয়টার সময় হলে প্রবেশ করে, আপনার স্মরণ আছে কি?’ জবাবে খায়ের বলেন, ‘আমি ঘড়ি না দেখায় সঠিক সময়টা বলতে পারছি না।’
এদিকে মামলার পরবর্তী ধার্য দিনে মামলার ১৪ নম্বর সাক্ষী সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য শেখ আব্দুল হালিম মামুন এবং ১৫ নম্বর সাক্ষী আবু ইউসুফের সাক্ষ্য ও জেরা হওয়া কথা রয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি পরীক্ষা দিতে মাদরাসায় গেলে তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় মাদরাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ আসামির বিচার চলছে। নুসরাত হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকা পাঁচজনের মধ্যে আসামি উম্মে সুলতানা পপি একজন।
বাড়ি ফিরেছেন শিরিনা আক্তার
নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বুধবার দুপুরে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নুসরাত হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে ফেনী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেয়া হয়। তাঁর ছেলে মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, মাকে কয়েক দিন পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁকে ওই দিন রাতেই বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।