ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বাদীকে নয় আসামির পক্ষে আইনজীবীদের জেরা সম্পন্ন করেছেন। আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদের আগামী ৩০ জুন এই মামলায় অপর সাত আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বাদীকে জেরা করতে ও স্বাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি হাফেজ আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার নুসরাতের দুই সহপাঠী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় বাদীর এই সাক্ষ্য ও জেরা নেয়ার কারণে তাদের সাক্ষ্য নিতে পারেনি। মামলার আগামী ধার্য তারিখে অপর সাত আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করবেন। একই সঙ্গে ওই দিন নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
পিপি হাফেজ আহমেদ আরো বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় আদালত মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান এই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। বেলা আড়াইটার দিকে তার স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত মূলতবী ঘোষণা করেন।
আদালত সূত্র জানায়, পরে ৩টার দিকে আদালতের বিচারক এজলাশে আসলে বাদীকে মামলার ১৫নং আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রহুল আমিনের পক্ষের আইনজীবী কামরুল হাসান, ৪নং আসামি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকসুদ আলমের পক্ষে গিয়াস উদ্দিন নান্নু , প্রধান আসামি মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার পক্ষে নুরুল ইসলাম, আসামী নুর উদ্দিন, শাহদাত হোসেন শামীম, কামরুন নাহার মনি ও উন্মে সুলতানা পপি পক্ষে আহসান কবির বেঙ্গল ও ইমরান হোসেন মামুনের পক্ষে মাহফুজুর রহমানসহ ১৬ আসামির মধ্যে ৯ জনের আইনজীবীরা মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আদালতে সাক্ষ্যদানকালে নুসরাতের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার পর তাকে উদ্ধারের আগ পর্যন্ত অবস্থার বর্ননা করেন।
নোমান আদালতকে বলেন, ওইদিন পরীক্ষা ছিল, লোকজন সেভাবে ছিল না। মেইন গেটে দারোয়ান ও পুলিশ ছিল। যে সাইক্লোন সেন্টারের ঘটনা তার গেট আবার মাঠের মধ্যে উল্টো দিকে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় অনেকে নুসরাতকে চিৎকার করতে দেখেছে পরে আয়া, বাংলা শিক্ষক, দারোয়ান ও পুলিশ কনস্টেবল সোহেল এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ হবার পর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসার পথে সে আমাদেরকে বলে, ‘শিক্ষক আমার গায়ে হাত দিয়েছে, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো।’
সূত্র জানায়, আগে ২০ জুন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালত।
এর আগে গত ২৮ মে ফেনীর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এরপর গত ৩০ মে মামলার ধার্য তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি না করে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন। ১০ জুন মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি শুরু করা হয়।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান ওরফে রাফিকে গত ৬ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ও পিবিআই এই মামলায় ২২ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৫ জনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়।
এর আগে গত ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নুসরাতকে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। ওই মামলা তুলে না নেয়ার কারণে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নুসরাতকে।