ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় সপ্তম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা চলছে।
রোববার (৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার প্রধান আসামি মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা, আওয়ামী লীগ নেতা রহুল আমিন ও কমিশনার মাকসুদসহ ১৬ আসামিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর তিন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শুরু হয়। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা বিক্রেতা জসিম উদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা চলছিল। এরপর ওই দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা হবে।
গত ২৭ জুন মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে প্রথমে নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ হয় নুসরাতের বান্ধবী সুলতানা নিশাত, নাসরিন সুলতানা ফূর্তি, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার ব্যক্তিগত সহকারী নুরুল আমিন এবং মাদরাসার নৈশপ্রহরী মোহাম্মদ মোস্তফার। এই সাক্ষীদের জেরাও করেন আসামিপক্ষের ১৬ আইনজীবী।
এদিকে নুসরাতকে হত্যার আগে গত ২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির অপর আরেকটি মামলায় একমাত্র আসামি সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। ৩ জুলাই ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলে আদালত তা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে স্থানান্তর করেন। আগামী ৯ জুলাই এই মামলার অভিযোগের শুনানির দিন ধার্য করেছে।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বোরকাপরিহিত দুর্বৃত্তরা। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের করা মামলায় ২১ জন আসামি থাকলেও পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ফেনীর পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
এ ১৬ জন হলেন অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন এবং মহিউদ্দিন শাকিল।
এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের অভিযোগ নেওয়ার সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।