নুসরাত হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্ভাবনাময়ী নুসরাতকে মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক এক পরিণতি বরণ করে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে। আধুনিক বিশ্ব, স্বাধীন দেশ আর সুশীল সমাজে কেউ কখনো এমনটি প্রত্যাশা করেনি। এক নুসরাতের বিদায়ে দেশ, সমাজ ও সভ্যতা আজ হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন। দেশের আপামর ব্যবস্থা বিশেষ করে মানুষের শিক্ষা, ধর্ম ও সংস্কৃতিমনষ্কতার অসারতাই যেন জানান দিয়ে গেল নুসরাত। নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় কঠোর অনুশীলনের পাদপীঠ মাদ্রাসার নিরাপদ চৌহদ্দি আজ নুসরাতের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হল। ইসলামে নারীর যে ন্যূনতম অধিকার তা তো দূরে থাক, খোদ ধর্মচর্চার কেন্দ্রেই একজন কিশোরী বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও হারালো। আমরা এ জঘন্য হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করি এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাই।
বিবৃতিতে দেশের আলেম সমাজের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, নুসরাতের বিয়োগান্ত ঘটনার পূর্বাপর আরো অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার খবরাখবর নিত্যদিন প্রকাশিত হচ্ছে। ইসলামি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে আপনারা এগুলোর সঠিক তদন্ত করুন; দেশের মাদরাসাগুলোর দিকে নজর দিন, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক করণীয় নির্ধারণ করুন। দেশের সাধারণ মানুষের মনে ধর্ম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়াসী হোন।
শিক্ষক নেতারা বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকে সমগ্র বিশ্বে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার পরিচালনার মূল চালিকাশক্তির অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নারীরা নিয়োজিত রয়েছেন এবং তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এমন একটি দেশে নারীদের প্রতি এহেন বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা জাতিগত ভাবে আমাদের সকল চিন্তা ও চেতনার শক্তিকে থমকে দেয়; এ থেকে অবশ্যই আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটিকে যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে দৃষ্টান্তমূলক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে শুরু করে দেশের আপামর জনগোষ্ঠী ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আপোসহীন এবং নুসরাতের প্রাণনাশের মর্মান্তিকতায় শুধুমাত্র শোকস্তব্ধই নয়, বরং এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িত অমানুষদের যথোপযুক্ত শাস্তি দেখতেও বদ্ধপরিকর। খেয়াল রাখা জরুরি যে, কোনো অপরাধী সে যতো প্রভাবশালীই হোক না কেন, যে দলের বা মতেরই হোক না কেন সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে নরপশুদের কঠিন শাস্তি বিধানে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। এটি যেন কোনোভাবেই সাগর-রুনি বা তনু হত্যাকান্ডের মতো বিচারের ধীরগতির গহ্বরে নিক্ষিপ্ত না হয়। সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, অপরাধীর শাস্তি বিধান করা ও সমাজকে কলুষমুক্ত রাখা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব; এক্ষেত্রে তার আশু বাস্তবায়ন কাম্য।