ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির চাচাতো ভাই ওমর ফারুক জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘৬ এপ্রিলের ঘটনার পর নুসরাতের পড়ার ঘর থেকে যে খাতা উদ্ধার করা হয় তাতে সে অনেক কিছুই লিখে রেখে গেছে। কীভাবে সিরাজ (মাদরাসার তখনকার অধ্যক্ষ) তার সাথে যৌন হয়রানি করেছে তারও উল্লেখ ছিল সেই লেখায়।’ আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রতিবাদী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় সোমবার ওমর ফারুক আদালতে এসব কথা বলেন।
গতকাল ওমর ফারুকসহ পাঁচজনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মামুনুর রশিদের আদালতে তাদের জবানবন্দি নেয়া হয়। এ নিয়ে মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হলো।
সূত্র মতে, ওমর ফারুক জবানবন্দিতে বলেন, ‘পুলিশ ও পিবিআই কর্মকর্তারা ওই খাতা উদ্ধার করে তা জব্দ তালিকায় লিপিবদ্ধ করলে আমি তাতে স্বাক্ষর করি।’ খাতার বিষয়টি উল্লেখ করে নুসরাতের চাচা আজহারুল হক এমরানও বলেন, ‘খাতাটি উদ্ধারের সময় আমি সামনে ছিলাম এবং জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, বিচারকের কাছে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে ফেনী পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল মো. রাসেল হোসেন বলেন, “৬ এপ্রিল সকালে আমি ওই মাদরাসার গেটে দায়িত্ব পালন করছিলাম। সকাল পৌনে ১০টার দিকে ‘আগুন’ ‘আগুন’ চিৎকার শুনতে পাই। দেখি, একটি মেয়ে গায়ে আগুন নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে। তার চিৎকারে অনেকেই জড়ো হলো শেল্টারের সামনে। আমি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তাকে নামিয়ে আনি। এ সময় তার গায়ে আগুন জ্বলছিল। আগুন নেভাতে গিয়ে আমার নিজের হাতের একাংশই পুড়ে যায়। পরে আমাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। সেদিন আমরা কয়েকজন ওই মেয়েকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। পরে ওই ভবনের ছাদ থেকে বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়।”
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ জানান, ওই তিনজন ছাড়াও সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (শিক্ষানবিশ) ডি এইচ এম জহির রায়হান ও উপসহকারী পরিদর্শক মো. আরিফুর রহমানের সাক্ষ্য নেয়া হয়। আজ মঙ্গলবার এ মামলায় আরও চারজনের সাক্ষ্য নেয়ার কথা রয়েছে। তাঁরা হলেন মো. ফজলুল করিম, মোসাম্মৎ রাবেয়া আক্তার, মোয়াজ্জেম হোসেন ও মো. জাফর ইকবাল।
সূত্র মতে, সোনাগাজী মডেল থানার এএসআই মো. আরিফুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, ‘গত ৯ এপ্রিল তারিখে বিকেলবেলায় আমি নুসরাতের বাড়িতে যাই এবং তার কক্ষের পড়ার টেবিল থেকে ৩৮ পৃষ্ঠার একটি খাতা স্বজনদের উপস্থিতিতে উদ্ধার করি। ওই খাতার এক থেকে আট পৃষ্ঠা পর্যন্ত নুসরাত ২৭ মার্চের ঘটনার বিষয়ে বেশ কিছু কথা লিখে রেখে গেছে। বিশেষ করে সাত ও আট নম্বর পৃষ্ঠায় অধ্যক্ষের যৌন হয়রানি বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে।’
গতকাল শুনানিকালে সব আসামি হাজির ছিল। পাঁচ সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে তাঁদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষে ছিলেন পিপি হাফেজ আহাম্মদ, এপিপি এ কে এস ফরিদ আহাম্মদ হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু।