রাষ্ট্রের এত এত দুর্নীতি আমরা যারা করছি কিংবা যারা এর সঙ্গে জড়িত তারা কি কেউ অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ অর্থাৎ মূর্খ? তারা কি প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পড়াশোনা করেননি? শিক্ষিত মানুষ হওয়া সত্তে¡ও কেন তারা এমন ভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা কেনই বা এমন খেলায় তারা নিজেকে সঁপে দেয়? কোথায় তাদের সমস্যা? বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, মৌলিক সমস্যা হচ্ছে নৈতিকতায়। অথচ আমরা শুনে থাকি শিক্ষা মানুষকে নৈতিক করে গড়ে তোলে। তাহলে তাদের কেন নয়? হরহামেশাই বিভিন্ন ধরনের কিন্ডারগার্টেন কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রচারণা বাণীতে লক্ষ করা যায় একটি বাক্য তথা ‘আপনার সন্তানকে স্কুলে পাঠান, মানুষ করার দায়িত্ব আমাদের’ অথচ তারা কি সত্যিই আমাদের মানুষ বানাতে পারছে? কেনই বা পারছে না? অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়ার পর তারা এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে আর তা হচ্ছে এক-দুই রোল কিংবা জিপিএ ফাইভ প্রলোভন। এর ফলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিচ্ছেন ঠিকই কিন্তু তা আর নৈতিকতা শিক্ষা হয়ে ওঠার সুযোগ নেই অর্থাৎ তারা শিক্ষার্থীদের মানুষ করে তোলার প্রতিশ্রুতিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হন। এর দায়ভার শুধু শিক্ষকদের ওপর নয় বরং পরিবারের অভিভাবকদের ওপর বর্তায় বৈকি। বলা হয়ে থাকে শিশু মস্তিষ্ক পাপমুক্ত ডিভাইস অর্থাৎ এ সময়ে শিশুদের মস্তিষ্কে যে প্রোগ্রাম ইনস্টল করা হয় পরিশেষে সে প্রোগ্রামই পরবর্তী জীবনের পাথেয় হয়। এবং সেটাই ঘটে।
আমরা ছোটবেলায় তাদের মস্তিষ্কে এক ভয়ানক প্রতিযোগিতার প্রোগ্রাম তথা (একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে আর কোনো পড়াশোনা নেই) এমন ধরনের অদ্ভুত বাণিজ্যিক প্রোগ্রাম ইনস্টল করে দেই। যার ফলে এ শিশুরাই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় এসেও গল্প, উপন্যাস কিংবা কবিতার বইকে চির বিরক্তিকর বিষয় মনে করে। ফলে মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গাটা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ একটা মানুষ অনৈতিক হয়ে যাওয়ার বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কেননা মুক্তবুদ্ধি চর্চা করা মানুষগুলো অতটা অনৈতিক কিংবা ধ্বংসাত্মক হতে পারে না। একজন অনৈতিক কিংবা দুর্নীতিপরায়ণ মানুষ যেমনি পরিবার সমাজের অকল্যাণ বয়ে আনে তেমনি রাষ্ট্রের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থায় নৈতিকতা চর্চা এখন সময়ের দাবি এবং রাষ্ট্রের আর্তনাদও বটে। তাই আমরা চাই নৈতিকতা চর্চা হোক প্রাথমিক পর্যায় থেকে অর্থাৎ যেখান থেকে একটা শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটা শুরু করে। আমাদের শিশুরা অ আ কিংবা ক খ শেখার আগে রপ্ত করতে শিখুক নৈতিকতা।
লেখক : হাওলাদার মুহা. হাসিব, বরিশাল