নোবেলজয়ী অভিজিতের অঙ্গীকার - দৈনিকশিক্ষা

নোবেলজয়ী অভিজিতের অঙ্গীকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাঙালির জাগরণ দেখে ভালো লাগছে। আবার, খানিকটা শঙ্কিতও বোধ করছি। আমরা আবেগে টগবগ করে ফুটছি। সংবাদপত্রে, টিভি চ্যানেলে, সোশ্যাল মিডিয়ার কলরবে গুণমুগ্ধতার কণ্ঠস্বর উচ্চধ্বনিতে বাজছে। হয়তো এর নানা কারণ রয়েছে। এক, দুই সহযোগীর সঙ্গে কৃতী বঙ্গসন্তান অভিজিত্ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থনীতিতে নোবেল জয়। তাকে নিয়ে আলাদাভাবে গর্বিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। জন্ম মুম্বাই-এ, কিন্তু লেখাপড়ার শুরু কলকাতার সাউথ পয়েন্টে, কলেজজীবন প্রেসিডেন্সিতে। বাবা বাঙালি। মা-মারাঠি হলেও বাংলার সংস্কৃতিকে, এখানকার দিনযাপনের অভ্যাসকে আত্মস্থ করে নেওয়া সুপরিচিত অধ্যাপিকা। শনিবার (১৯ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, রবীন্দ্রময় অভিজিৎ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রবীন্দ্রগান গাইতে পারেন। বাংলা বলার সময় তার মুনশিয়ানায় ইংরেজি শব্দের প্রয়োগ নেই। অনেকটা সত্যজিৎ রায়, শঙ্খ ঘোষ কিংবা আনিসুজ্জামানের মতো। দীর্ঘদিন জুড়ে বিদেশে বসবাস সত্ত্বেও নিখুঁত বাঙালি, নিখুঁত ভারতীয় হয়ে থাকাটা যে কত জরুরি, কতটা সহজ তা না বলেই জানিয়ে দেন বাকভঙ্গিতে, আচরণেও। এখানে তার আন্তর্জাতিকতার সঙ্গে জাতীয়, দেশজ পরিচিতির বিরোধ নেই। একান্ত সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেছেন, দেশ বলতে ভারতকেই বুঝি। যারা উগ্রজাতি ‘প্রেমে’ আচ্ছন্ন, ভারতীয়তা বোধের বদলে সারহীন, ভাবহীন, নির্বোধ ভাবাবেগ জাগিয়ে তুলতে চাইছেন, তাদের লাফালাফির বিরুদ্ধে অভিজিতের বুদ্ধিদীপ্ত দেশাত্মবোধ অবশ্য, অতিঅবশ্যই একটি মহাচ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে, বিশেষ করে এই মুহূর্তে, ক্ষুদ্রচিন্তার মোকাবিলায় আমরা জেগে উঠলাম। সম্ভবত এ কারণেও আমাদের ভাবনা, আমাদের অন্তর আলোড়িত। এ আলোড়নের সানন্দ প্রকাশকে বুদ্ধি, যুক্তি ও বিবেকের পরিধিতে জড়ো করে ভেবে দেখা দরকার।

তবু একটি প্রশ্ন উঠতে পারে। নোবেল কমিটি অভিজিৎসহ এসতার ডাফলো, মিশায়েল ক্রেমার-এর নাম যখন বিবেচনা করে, তখন কি তাদের নজরে জাতিপরিচিতির চিন্তা সামান্যতম গুরুত্ব পেয়েছে? তারা কি একবারও ভেবেছেন, জন্মসূত্রে বাঙালি, ফরাসি ও মার্কিন—অর্থশাস্ত্রীদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে? না। একেবারেই নয়।

সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য রোখার সমীক্ষাপদ্ধতি (র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল—আরসিসিটি) আর কল্যাণমুখী অর্থনীতি চর্চার দিকদর্শী বলেই তিন গুণীকে বেছে নেওয়া হয়। যারা প্রথমত, দ্বিতীয়ত, তৃতীয়ত—সব অর্থেই বিশ্বনাগরিক। যে কোনো সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে, অনেক ঊর্ধ্বে তাদের অবস্থান। অতএব, কেবল অভিজিৎকে নিয়ে নয়, তিন নোবেলজয়ীর কৃতিত্বের স্বীকৃতিকে সমদৃষ্টিতে দেখা, বিচারকরা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, কেবল অভিজিৎ আমাদের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের লক্ষ্য হলে অন্ধতার ঝাঁপিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এতে অভিজিতের অর্জিত মহিমা আর সমাজদর্শনের অখণ্ডতা খাটো হয়ে যাবে। কারো কারো, মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার ‘বিজ্ঞজনের’ হাস্যকর, যুক্তিহীন লাফালাফি বড্ড বেশি চোখে বিঁধছে। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তি আর বিবেকের শত্রুরা অভিজিতের ন্যায়চিন্তাকে, মেধাকে যে ভাষায় কটাক্ষ করছে, তাতে জাতিচিন্তার স্বচ্ছতা আর গ্রহণশীলতা; গণতান্ত্রিকতা আর বহুমতের পরিসরে ক্ষুদ্রতার ক্ষমতা বেড়ে উঠবে। প্রশ্রয় পাবে নির্বোধ উগ্রতা আর বিচারহীন বৈষম্য। যেহেতু অভিজিত্ আর দুই সঙ্গীর লড়াইয়ের অর্থনীতি গরিবের ক্ষমতায়ন দাবি করছে, দাবি করছে সুবিচার আর সহনশীলতার; শিক্ষার বিবেচিত বিস্তার আর উন্নয়নের সমবণ্টন—যে কারণেই আমাদের সানন্দ উচ্ছ্বাসে সংযম ও যুক্তিময় নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। এটাই অভিজিতের মেধার প্রয়োগের সুন্দরকে, বৃহত্তর প্রেমকে আরো উঁচু করবে।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের মুহূর্তে জাতীয়তাবাদের খণ্ডিত চেহারা দেখে আঁতকে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে—সজল উচ্চারণে বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি’। তার ওই আক্ষেপ, ওই সতর্কবার্তা আজ অধিকতর প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। যা অন্য চোখে, ভিন্ন ভাষায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন গুরু সদয় দত্ত—বিশ্ব-মানব হবি যদি আগে তবে বাঙালী হ! জাতি পরিচিতির অসীম আর মানবিকতার অশেষকে একই সারিতে বসাতে চেয়েছিলেন ব্রতচারী আন্দোলনের মহান স্রষ্টা। অভিজিত্ তার গবেষণা দিয়ে, অর্থশাস্ত্রকে মেদবহুল তত্ত্বের বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে, সরেজমিন সমীক্ষাকে বিশেষ মূল্য দিয়ে প্রকারান্তরে বড়ো করেছেন ঐত্যিহের ওই উত্তরাধিকারকে, যা বাঙালির বিশ্বভাবনার, অপরিহার্য শর্ত ও সত্য। সত্যের এ দাবিকে এড়িয়ে যাওয়া অন্যায়।

বাহার উদ্দিন : ভারতীয় সাংবাদিক, সম্পাদক আরম্ভ পত্রিকা।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032060146331787