দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ অন্যতম। ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার নামে ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০ হাজার। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। অথচ তাদের আবাসনের জন্য জরাজীর্ণ যে ছাত্রাবাসটি রয়েছে, সেটির আসন সংখ্যা মাত্র ৩৯।
ছাত্রদের অভিযোগ, প্রাচীন এ কলেজের অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বরাবরই অবহেলিত রয়ে গেছে ছাত্রদের আবাসনের বিষয়টি। একমাত্র ছাত্রাবাসটিতে বসবাস করছে ৩৯ জন। অন্যরা বাধ্য হয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছেন। অনেকে ভাড়ার খচর জোগাতে না পেরে প্রতিদিন ২০-২৫ কিলোমিটার দূর থেকে কলেজে আসছেন। আর যারা এখানে আছেন, তাদের বিষয়ে কলেজ প্রশাসনের কোনো মাথাব্যাথা নেই। ছাত্ররা নিজ উদ্যোগেই মেসের মতো করে ছাত্রাবাসটি পরিচালনা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিউ মুসলিম হোস্টেল নামে বর্তমান ছাত্রবাসটি নির্মাণ করা হয় ১৯৮৬ সালে। ওই সময় এটিসহ মোট তিনটি ছাত্রাবাস চালু ছিল। এর মধ্যে দুটি পরিত্যক্ত হয় ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে। অথচ ১৯৯৭ সালে অনার্স কোর্স চালুর পর থেকে কলেজটিতে ছাত্র সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যাদের অধিকাংশেরই শহরে আবাসনের ব্যবস্থা নেই।
দেখা গেছে, দ্বিতল ছাত্রাবাসটির মোট কক্ষ রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে দুটি বিনোদন ও অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকি ১৩টি কক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ জন ছাত্র থাকার মতো ব্যবস্থা আছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ধরেছে। টয়লেটগুলো নোংরা এবং ছোট রান্নার ঘরটিও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
মো. শাহীন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাবে ছাত্রাবাসটির পরিবেশ একেবারেই নোংরা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ডাইনিং রুমের। এখানে বসে খাওয়ার কোনো পরিবেশই নেই। রান্না ঘরের অবস্থাও বেহাল।
শিক্ষার্থী রতন হালদার ও নিজাম শেখ বলেন, ছাত্রাবাসে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো আসবাব সরবরাহ করে না। তারা নিজেদের টাকায় এসব কিনে থাকেন। পানি সরবরাহ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
এ অবস্থায় কলেজের অধিকাংশ ছাত্রকে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাইরে থাকতে হচ্ছে। শহরের মহিষখোলা এলাকায় একটি মেসে থাকেন বাংলা শেষ বর্ষের ছাত্র রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, বাইরে থাকতে গিয়ে তাকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
কলেজ থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূর লোহাগড়া উপজেলার শামুকখোলা গ্রাম থেকে প্রতিদিন বাসে কলেজে আসেন ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আলিমুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিদিন যাতায়াতে তার ৭০-৭৫ টাকা খরচ হয়। ব্যয় হয় বাড়তি সময়। অথচ কলেজে নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হলে তার মতো বহু ছাত্র এ সংকট থেকে মুক্তি পেত।
ছাত্রাবাসের দায়িত্বে থাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েম আলী বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্রাবাসটি কলেজের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এখানে মূলত বহিরাগতরা থাকত। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এটি ছাত্রদের থাকার উপযোগী করার চেষ্টা করছি। ছাত্রদের আবাসন সমস্যা সমাধানে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে।
কথা হলে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রবিউল ইসলাম ছাত্রদের আবাসন সংকটের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কলেজের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য তিন ও পাঁচতলা দুটি বড় ভবন রয়েছে। সেখানে প্রায় ৩০০ ছাত্রীর আবাসন ব্যবস্থা আছে। নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ করে ছাত্রদের আবাসন সমস্যারও সমাধান করা হবে।