পঞ্চম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান - দৈনিকশিক্ষা

পঞ্চম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা শিশুদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমানোর কথা বলছি। অথচ সেই চাপ কমাবার পথে না গিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতেও একটি পরীক্ষা যোগ করেছি। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও বলেছেন—এই পরীক্ষার কোনো আবশ্যকতা নেই, এটা শিক্ষার্থীদের জন্য পীড়ন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।’

আজ বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে সহজ পাঠ আয়োজিত ‘শিশুবান্ধব সমাজের সন্ধানে’ আলোচনা চক্রে শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান এসব কথা বলেন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘দেশের শিক্ষার অবস্থা শোচনীয়। কারণ, শিক্ষাকে নামিয়ে আনা হয়েছে পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার মধ্যে। শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষাকেন্দ্রিক হওয়ায় জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। যে স্কুলে শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষায় ভালো করে, বলা হয় যে সেখানে ভালো শিক্ষা পাওয়া যায়।’

শিক্ষার শোচনীয় অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্পর্কে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমরা শিশুবান্ধব শিক্ষা চাই। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের যোগ চাই। শিক্ষায় খেলাধুলা, নাচ-গান, ছড়া, চারুকলা ইত্যাদি থাকবে। কিন্তু সর্বশেষ শিক্ষা কমিশনে গান-নাচকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হলে একটি শ্রেণি থেকে কোনো রকম ভাবনাচিন্তা না করেই প্রতিক্রিয়া হলো, সরকার দেশের সব মেয়েকে বাইজি বানানোর চেষ্টা করছে। এমনকি তাদের এই বীভৎস মন্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় চেষ্টা করল নৃত্যের সমার্থক শব্দ বের করতে।’

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন ও শামসুল হক শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। তিনি পরীক্ষার মূল্যায়ন নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বলেন, সে সময়ও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ১৯৮৯ সালে গৃহীত আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার কনভেনশনে প্রথমে অনুস্বাক্ষর করা দেশগুলোর একটি। কিন্তু এর ১৪ (১) এবং ২১ ধারা নিয়ে আপত্তি থেকে গেছে। অনুচ্ছেদ-১৪ (১)-এ বলা হয়েছে ‘অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে’ এবং ২১ অনুচ্ছেদে ‘শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের কথা সর্বাধিক বিবেচনা করে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র দত্তক পদ্ধতিকে স্বীকৃতি ও অনুমোদন দেবে’৷ কিন্তু বাংলাদেশের একশ্রেণির মানুষ এ দুটি অনুচ্ছেদ মেনে নিতে আপত্তি জানিয়েছে। এ কারণেও শিশু অধিকার পুরোপুরি অর্জনে দেশ পিছিয়ে আছে। তিনি প্রশাসনের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো শিক্ষকতার জন্যও একটি সার্ভিস কমিশন দরকার বলে মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং বিভাগের অধ্যাপক শাহীন ইসলাম বলেন, ‘আমরা শিশুদের আমাদের মতো করে শেখাতে চাই। তারা কীভাবে শিখতে চায়, তা দেখা হয় না। শিশুদের হাঁটতে শেখার মধ্য দিয়েই বোঝা যায়, তারা জানে কীভাবে ব্যর্থতাকে সফলতায় পরিণত করা যায়। এ কারণে সমাজে কেবল তাদের পরিচর্যা করলেই হবে না, সেই কাঠামোও তৈরি করতে হবে।’

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলে, ‘আমরা শিশুবান্ধব সমাজের সন্ধান করছি, সহজপাঠ তারই একটি উদ্যোগ। খবরের কাগজের এক প্রতিবেদনে এসেছে বাংলাদেশের শতকরা ৬৯ ভাগ অভিভাবক চায় বিদ্যালয়ে শিশুদের মারা হোক। এটা খুবই আশঙ্কাজনক। শিক্ষার জন্য ভীতিমুক্ত পরিবেশ দরকার। পাঠ্যসূচিতে গল্প-কবিতা ফিরিয়ে আনা দরকার।’ হতাশ হওয়ার জন্য যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণিত অলিম্পিয়াডে দেখেছি মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষার্থীরাও বেশ বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করছে। প্রতিটি মানুষ একেকটি আশ্চর্য সম্ভাবনাময় প্রাণী। বিরূপ পরিবেশে থেকেও তারা সম্ভাবনার বিকাশ ঘটায়।’

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করা নুরুন্নাহার নূপুর বলেন, ‘আফ্রিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় লেখা ছিল—একটি দেশকে ধ্বংস করার জন্য বোমা মারার দরকার নেই, শিক্ষার্থীদের নকল করতে দাও। তাহলে এ শিক্ষায় যেসব চিকিৎসকেরা বের হবে, তারা রোগী মারবে। প্রকৌশলীরা যা বানাবে তা ভুল হবে, ধসে পড়বে। আইনজীবীরাও ভুল কাজ করবেন। আমাদের দেশেও এমন হচ্ছে বলেই আমরা চাপ অনুভব করছি।’ তিনি বলেন, শিশুরা তাদের পরিবার, চারপাশের পরিবেশ এবং বিদ্যালয়ে শেখানো মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না। শ্রেণিকক্ষে ‘সৎ থাকা, সত্য কথা বলা’ শেখানো হচ্ছে, কিন্তু তা হয়তো অন্য পরিবেশে বা পরিবারে গিয়ে সে শুনছে, ‘সততা কোনো বিষয়ই না, তোমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।’

আলোচনা চক্রে বলা হয়, শিশুরা তাদের শৈশব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিভাবকদের সঙ্গে শিশুদের ব্যক্তিত্বের সংঘাত হচ্ছে। শৈশবের বুনিয়াদ ভালো না হলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।

আলোচনা চক্রের সঞ্চালনা করেন সহজ পাঠের আহ্বায়ক ও সাংবাদিক আবদুল মোমেন। সহজ পাঠের সচিব বেলাল সিদ্দিক একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। আলোচনা চক্রে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, লেখক ও সহজ পাঠের উদ্যোক্তা পারভেজ হোসেনসহ সহজপাঠের শিক্ষাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070369243621826