চট্টগ্রামের পটিয়া টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) ৫০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন তড়িঘড়ি করে জমা দিয়েছে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের গঠিত কমিটি। ২৪ ঘণ্টা না যেতেই গত সোমবার সকালে জমা দেয়া এ প্রতিবেদনে যৌন হয়রানির বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে। যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তের জন্য এ কমিটি আলাদা কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, চট্টগ্রামের টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) ৫০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী চার প্রশিক্ষকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। খোদ এক প্রশিক্ষক তার এ চার সহকর্মীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন। বিচার না পেয়ে কোন উপায় না দেখে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি লিখে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তিনি।
প্রশ্ন হচ্ছে, তড়িঘড়ি করে বা বিদ্যুৎগতিতে তদন্ত করা হচ্ছে কেন? আর যৌন হয়রানির বিষয়টি উপেক্ষিতই বা থাকবে কেন তদন্ত প্রতিবেদনে? এ রকম একটা গুরুতর বিষয় তো প্রাধান্য পাওয়ারই কথা। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে যে, ঘটনাটি কি ধামাচাপা দেয়ার জন্য এ রকম করা হচ্ছে। আমাদের দেশে সাধারণত যে কোন বিষয় তদন্তের ক্ষেত্রে হয় ধীরগতি দেখা যায় অথবা দ্রুতগতিতে তড়িঘড়ি করে তদন্ত করতে দেখা যায়। এজন্য সুষ্ঠুভাবে কোন ঘটনার তদন্ত হয় না এবং আসল ঘটনাও বের হয় আসে না। তদন্ত কমিটি গঠন করাই হয় যেন ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলস্বরূপ দেখা যায় বিচার আর হয় না।
পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমভাবে নারীও মানবজীবনের সব আয়োজনে ভূমিকা রাখলেও নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি আজও পাল্টায়নি। তার একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এ ঘটনাটি। এখনও আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে দুর্বল গণ্য করে পুরুষের চিন্তাভাবনাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়।
আন্দোলনের মুখে পটিয়ার পিটিআইয়ের চার প্রশিক্ষককে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আমরা চাই, তাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগের দায়ে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তারা যেন আর কোথাও চাকরি (সরকারি-বেসরকারি) করতে না পারেন সে পদক্ষেপও নিতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত। দ্রুতগতিতে তড়িঘড়ি করে কোন তদন্ত যেন না হয়।