'পরশ্রীপুলক' - দৈনিকশিক্ষা

'পরশ্রীপুলক'

মুহম্মদ জাফর ইকবাল |

না, বাংলা ভাষায় 'পরশ্রীপুলক' বলে কোনো শব্দ নেই। তবে আমার খুব শখ 'পরশ্রীকাতর'-এর বিপরীত শব্দ হিসেবে বাংলা ডিকশনারিতে 'পরশ্রীপুলক' বা এ ধরনের কোনো একটা শব্দ যেন জায়গা করে নেয়! বঙ্গবন্ধু তার 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে পরশ্রীকাতর শব্দটি নিয়ে অনেক দুঃখ করেছেন। লিখেছেন, ''পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে 'পরশ্রীকাতর' বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙ্গালীদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এজন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।..." এর চেয়ে বড় সত্য কথা আর কী হতে পারে?

তবে আমি হঠাৎ পরশ্রীকাতরতা শব্দটি নিয়ে কেন কাতর হয়েছি, সেটি একটুখানি ব্যাখ্যা করি। কিছুদিন আগে সংবাদপত্র পড়তে পড়তে হঠাৎ ছোট একটা খবর আমার চোখে পড়ল। খবরটি হচ্ছে আইএমএফ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, সামনের বছর বাংলাদেশের জিডিপি ভারতের জিডিপিকে অতিক্রম করে যাবে। খবরটি দেখে আমি অবশ্যই একটুখানি মুচকি হেসেছি। তবে আমার যেসব সীমাবদ্ধতা আছে তার একটি হচ্ছে অর্থনীতি বোঝার অক্ষমতা। তাই খবরটির কোনো গুরুত্ব আছে কিনা বুঝতে পারলাম না। অনুমান করলাম, আমাকে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে; খবরটি অন্যান্য পত্রপত্রিকা কীভাবে প্রকাশ করে সেটি দেখতে হবে। বিশেষজ্ঞরা যদি বিষয়টি বিশ্নেষণ করে লেখালেখি করেন তাহলে আমি হয়তো গুরুত্ব খানিকটা অনুমান করতে পারব।

আমি কয়েক দিন খবরের কাগজের দিকে চোখ রাখলাম। দেখলাম সেটা অন্যান্য সংবাদপত্র তেমনভাবে প্রচার করল না। আমি সব পত্রপত্রিকা পড়ি না, টেলিভিশন দেখি না। তাই যারা দেশের খবরাখবর রাখেন তাদের জিজ্ঞেস করলাম, তারাও সেভাবে জানেন না। কয়েকজন আমার কাছ থেকেই প্রথম শুনলেন। আমি নীতিগতভাবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে কী লেখালেখি হচ্ছে সেটা জানার চেষ্টা করি না। সেখানে কী হচ্ছে সেটা জানার আমার কোনো কৌতূহল হয়নি। এ রকম সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠনের একজন অর্থনীতিবিদ শেষ পর্যন্ত খবরটা বিশ্নেষণ করে একটা প্রতিবেদন লিখলেন। সেই প্রতিবেদন পড়ে বুঝতে পারলাম, খবরটার আসলে তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। আইএমএফের ভবিষ্যদ্বাণী অনুমাননির্ভর। অনুমান উনিশ-বিশ হলেই সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়, যার অনেক জলজ্যান্ত উদাহরণ আছে। শুধু তাই নয়, এ রকম বিষয় তুলনা করতে হলে ক্রয়ক্ষমতা দিয়ে তুলনা করতে হয়। সেভাবে তুলনা করলে বাংলাদেশ ভারত থেকে যথেষ্ট পিছিয়ে থাকবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আরও বড় বড় সমস্যা আছে। তাই আইএমএফের এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী দেখে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। পানির মতো সহজ করে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমিও সবকিছু বুঝে ফেললাম এবং ব্যাপারটা ভুলে গেলাম।

তবে একেবারে পুরোপুরি ভুলতে পারলাম না, কারণ কভিডের কারণে যেহেতু মানুষ একে অন্যের সঙ্গে দেখা করতে পারে না, তাই সবার ভেতরে একটা নতুন কালচার শুরু হয়েছে। সেটা হচ্ছে একে অন্যের কাছে 'লিঙ্ক' পাঠানো। যখনই কারও একটা তথ্য, ছবি, গান কিংবা রসিকতা পছন্দ হয় একে অন্যের কাছে সেটা পাঠিয়ে দেয়। সেভাবে হঠাৎ আমি একাধিক প্রতিবেদন দেখতে পেলাম। সেগুলো ভারতের সাংবাদিকদের। যারা পাঠিয়েছে তারা জানালো এগুলো ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিকদের প্রতিবেদন। আমি এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে আবিস্কার করলাম, আমাদের দেশের অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা যে তথ্যটিকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে রাজি নন, সেই তথ্যটি নিয়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ ছোট্ট একটুখানি দেশ। ভারতের ছেলেমেয়েদের তাদের ভূগোল ক্লাসে যখন ভারতের ম্যাপ আঁকতে হয় তখন বাংলাদেশের ম্যাপটিও পুরোপুরি আঁকতে হয়। কারণ ভারত বাংলাদেশকে প্রায় পুরোপুরি ঘিরে রেখেছে। কাজেই আমার ধারণা ছিল, ভারতীয় সাংবাদিকদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কারণ বাংলাদেশের মতো ছোট একটুখানি দেশ অর্থনীতির কোনো একটি সূচকে ভারতকে টেক্কা দিয়ে ফেলবে সেই লজ্জায়। প্রতিবেদনে তারা হয়তো বলবে, 'হায় হায়! ভারতের একি দুর্দশা! এখন আমরা বাংলাদেশের মতো পুঁচকে একটি দেশের কাছে হেরে যাচ্ছি? ছিঃ, ছিঃ ছিঃ!' কিন্তু ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রতিবেদন দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম, অবশ্যই সেখানে নিজ দেশের অর্থনীতির দুর্দশা নিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনা আছে, কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি আছে বাংলাদেশের প্রশংসা। সব দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে, অর্থনীতি যখন নিচের দিকে ধাবমান (আহা বেচারা পাকিস্তান!) তখন শুধু বাংলাদেশ বেশ কয়েক বছর থেকে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। যে তথ্যগুলো আমার নিজের দেশের পত্রপত্রিকা থেকে, আমার নিজের দেশের অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের মুখ থেকে জানার কথা ছিল, সেই তথ্যগুলো আমাকে জানতে হলো ভারতীয় সাংবাদিকদের থেকে। অমর্ত্য সেনের মুখ থেকে মাঝেমধ্যে জেনেছি, আমাদের দেশের সামাজিক নিরাপত্তার সূচকগুলো ভারত থেকে অনেক ভালো। নানা ধরনের অলিম্পিয়াডে আমাদের ছেলেমেয়েরা কেমন করছে সেই তথ্যগুলোর দিকে আমি নজর রাখি। কিন্তু আমার দেশের পত্রপত্রিকা, আমার দেশের বিশেষজ্ঞদের মুখ থেকে প্রশংসাসূচক কিছু শুনতে পাই না! ভারতীয় সাংবাদিকদের মুখ থেকে আমি জানতে পারলাম, বাংলাদেশ নাকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবোট তৈরি করে কোরিয়াতে রপ্তানি করেছে! এই দেশের কতজন এটি জানে? আমি তো জানতাম না!

আমি একবারও দাবি করছি না, বাংলাদেশের এখন কোনো সমস্যা নেই। এটি পৃথিবীর মাঝে একটি আদর্শ দেশ হয়ে গেছে। আমি খুব ভালো করে জানি, গভীর রাতে গাড়ি করে ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় গেলে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ ফুটপাতে ঘুমিয়ে আছে। যে মানুষটি তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে ফুটপাতে ঘুমিয়ে আছে, তাকে ঘুম থেকে তুলে যদি বলি, 'আপনি কি জানেন বাংলাদেশের জিডিপি ভারতের জিডিপিকে অতিক্রম করে যাবে?' তাহলে সে কি এ কথাটির অর্থ বুঝতে পারবে? আমি নোয়াখালীতে যে গৃহবধূ স্থানীয় মাস্তানদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে তাকে যদি বলি, 'বাংলাদেশের সব সামাজিক সূচক ভারত থেকে ভালো'- সেই গৃহবধূ কি তাহলে তার লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণার কথা ভুলে যাবে? যে মায়ের সন্তানকে পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তাকে যদি বলি, 'আপনি মন খারাপ করবেন না। আমাদের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ আকাশছোঁয়া।' তিনি কি কোনো সান্ত্বনা পাবেন? পাবেন না।

আমাদের দেশের সব মানুষের মতো আমিও এই দেশের বুকে যে রক্তক্ষরণ হয় তার কথাগুলো জানি। সেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য যে সংগ্রাম করে যেতে হবে, সেটিতে দেশের সব মানুষ অবশ্যই অংশ নেবে; অন্যায় অবিচার কিংবা বিচারহীনতার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে যাবে। যতদিন হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ না হবে কেউ যে থেমে যাবে না, সেটাও জানি।

কিন্তু যদি দেশ নিয়ে একটুখানি ভালো কথা, একটুখানি আশার কথা, স্বপ্নের কথা বলার সুযোগ থাকে, তাহলে কেন আমরা সেটি বলব না? ভারতীয় সাংবাদিকরা যদি একটা বিষয় নিয়ে প্রশংসা করতে পারে তাহলে আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা কেন একটুখানি প্রশংসা করতে পারেন না? বিষয়টি নিয়ে যখন আমি চিন্তা করি তখন আমার বঙ্গবন্ধুর সেই কথাটি মনে পড়ে, "... বাঙ্গালীদের মাঝে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না ..." এটিই কি কারণ? পরশ্রীকাতরতা কি আসলেই আমাদের রক্তের ভেতর ঢুকে গেছে? আত্মতুষ্টি হয়ে যাবে সেই ভয়ে আমরা নিজেদের প্রশংসা করতে পারব না? আমার ছাত্রছাত্রীরা যখন আমেরিকা-জাপানকে হারিয়ে সারা পৃথিবীর মাঝে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় কিংবা অলিম্পিয়াডে সোনার মেডেল পেয়ে যায়, তখনও আত্মতুষ্টি হতে পারবে না? অতি অল্পে আমি খুশি হই। কারণে অকারণে আমার আত্মতুষ্টি হয়, তাহলে আমি কি সারাটা জীবন ভুলভাবে বেঁচে থাকলাম? নিজের তো কখনও তা মনে হয়নি, আমার মতো আনন্দে কতজন বেঁচে আছে?

যারা জীবনেও অন্য কারও প্রশংসা করেনি, তারা কি জানে প্রশংসা শুনতে যত আনন্দ হয় তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ হয় প্রশংসা করতে? আমার কথা বিশ্বাস না হলে বলব একবার চেষ্টা করে দেখতে। শুধু মনে রাখতে হবে তোষামোদ আর প্রশংসার মাঝে কিন্তু অনেক পার্থক্য। তোষামোদ দেখতে দেখতে এবং শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমরা এখন সত্যিকারের প্রশংসা শুনতে চাই! ছোট বাচ্চাদের দিয়েই শুরু করা যায়। ভাত খেয়ে ছোট শিশুটি তার মাকে বলবে, 'আম্মু, কী মজা হয়েছে তোমার রান্না! একেবারে ফাটাফাটি!', কিংবা বন্ধুকে বলবে, 'তোকে দেখতে আজকে কী স্মার্ট লাগছে!' কিংবা রিকশাচালককে বলবে, 'আপনার গায়ে কী জোর! একেবারে গুলির মতো নিয়ে যাচ্ছেন রিকশাটাকে!' এই কালচার তো খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়।

তবে আইএমএফের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞদের মতামত দেখে আমার যেটুকু মন খারাপ হয়েছিল; একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলামের প্রতিবেদন 'উন্নয়নেও ভারতকে টপকে যাবে বাংলাদেশ, যদি দুর্নীতির লাগাম থাকে' পড়ে অনেকখানি কেটে গেছে! শিরোনামটি অনেক বড় এবং এই শিরোনামটিতেই তার মনের কথা পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন। ড. মইনুল ইসলাম আমার খুব পছন্দের মানুষ। গত নির্বাচনের পর তিনি হচ্ছেন আমার দেখা একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ মানুষ যিনি খুব খোলামেলাভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কঠিন সমালোচনা করেছিলেন; সত্যি কথা বলতে এতটুকু দ্বিধা করেননি। তাই আইএমএফের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়েও সত্য কথা বলতে দ্বিধা করেননি। যেটুকু নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কথা সেটা যে রকম বলেছেন, ঠিক সে রকম যেটুকু নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেটাও বলেছেন। তার লেখাটা পড়ে আমরা উৎসাহ পেয়েছি; ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে পেরেছি। অন্য বিশেষজ্ঞের বিশ্নেষণের মতো হতাশ হইনি। একই বিষয় নিয়ে দু'জন বিশেষজ্ঞ কথা বলেছেন। একজন সঠিক বলেছেন, অন্যজন ভুল বলেছেন; সেটা তো হতে পারে না। দু'জনেই নিশ্চয় তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সঠিক। তাই যদি সত্যি হয় তাহলে কেন আমরা পরশ্রীকাতর হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেব? পরশ্রীপুলকিত হতে সমস্যা কোথায়?

কোনো কোনো খবর পড়তে আমাদের আনন্দ হয়। তার মানে এই নয় যে আমরা ঘোর অবাস্তব একটা আশাবাদে মগ্ন হয়ে উল্লসিত হয়ে থাকব। ভারতের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যগুলোর কথা আমি পুরোপুরি জানি। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এখন ভয়াবহ অবস্থা। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এত বড় অন্যায় আসলে মেনে নেওয়া যায় না। শুধু সত্যিকারের শিক্ষাবিদদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের পরের ধাপগুলোতে হাত দেওয়া যাবে। যতদিন সেটি না হচ্ছে ততদিন কোনো কিছু আশা করে লাভ নেই। যেখানে রাজনীতি করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার প্রথম এবং প্রধান যোগ্যতা, সেখানে শুধু শুধু র‌্যাঙ্কিং নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। শুধু আমাদের ছাত্রছাত্রীদের অনেকে নিজের উদ্যোগে লেখাপড়া করে বলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিকে আছে। এক দুইজন শিক্ষক সবার হাসি ও কৌতুকের পাত্র হয়ে স্রোতের উজানে গিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন; পত্রপত্রিকায় কলাম এবং টেলিভিশনের টকশো না করে 'নেচার'-এ পেপার ছাপিয়ে ফেলেছেন। তাদের দেখে আমরা আশায় বুক বেঁধে থাকি।

ভারতের মানুষদের দু-একজন খাঁটি গবেষক আর ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের উদ্যোগের ওপর ভরসা করে থাকতে হয় না। তাদের দেশে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, ছাত্রছাত্রীদের বিশ্বমানের লেখাপড়া হয়; বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রে বিশ্বমানের গবেষণা হয়। আমি তাদের দেখি এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলি!

আমি হিংসা এবং ঈর্ষায় নীল হয়ে যাই যখন দেখি হলিউডে একটা সিনেমা বানাতে যত টাকা খরচ হয় তার থেকে কম খরচে ভারত মহাকাশে যান পাঠাচ্ছে। তাদের গবেষকরা করোনার জন্য পিসিআর টেস্টের কাছাকাছি নিখুঁত একটি কাগজনির্ভর প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে। তার নাম দিয়েছে সত্যজিৎ রায়ের বইয়ের চরিত্র অবলম্বনে 'ফেলুদা', যার অর্থ গবেষকরা নিশ্চয়ই বাঙালি! আমাদের দেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যখন একেবারে নিজস্ব অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিজেন টেস্ট বের করেছে, তখন তাদের কোনো উৎসাহ দেওয়া হয়নি। কাজকর্ম দেখে মনে হয়, সরকারের কাছে ড. জাফরুল্লাহর রাজনৈতিক পরিচয়টাই ছিল একমাত্র পরিচয়। হতে পারে সেটি পুরোপুরি মানসম্মত হয়নি, কিন্তু নিজের দেশের একটি উদ্ভাবনীকে উৎসাহ দিলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো?

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। আমি জানি, তাদের একটুখানি সুযোগ দেওয়া হলে কত অসাধ্য সাধন করে ফেলে। যদি জিডিপিতে ভারত থেকে অনেক পিছিয়ে থেকেও বিজ্ঞান গবেষণায় আমরা আরও একটুখানি এগিয়ে যেতে পারতাম তাহলে আমার আনন্দের সীমা-পরিসীমা থাকত না।

যে বিষয়টি আমাদের নাগালের বাইরে সেখানে পৌঁছাতে না পারলে দুঃখ হয় না। কিন্তু যেটি একেবারে নাগালের ভেতরে, হাত বাড়ালেই স্পর্শ করতে পারব সে রকম কিছু একটা যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় তখন অনেক দুঃখ হয়, অনেক কষ্ট হয়।

২৮ অক্টোবর, ২০২০

লেখক : মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কথাসাহিত্যিক, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039329528808594