আবহাওয়া খারাপ। শীতের আগমনে অসময়ে ব্যতিক্রমী আষাঢ়ে সাজ। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ৮ দফা দাবি। রোববার সকাল ছয়টা থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট। সকল যান চলাচল বন্ধ। মানুষ জিম্মি।
তবু রোগীকে নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। লাশ নিয়ে যেতে হবে দাফনের জন্য। পাত্রী আনতে যাবে বরপক্ষ। কান্নায় বিভোর কনেকে বিদায় দিতে বাবা যাবে কমিউনিটি সেন্টারে। কিন্তু তাঁদের যেতে দেওয়া হবে না। কারণ, আজ পরিবহন ধর্মঘট।
কী নিষ্ঠুরতা! যে ড্রাইভার বুঝাতে চেয়েছিল এটা জরুরি ট্রিপ। যেতে হবে। তাঁর মুখে কালির লেপনে কালিমা। মারধর। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি ক্লাস। সামনে পরীক্ষা। যেতে হবে নিজের গাড়িতে। ফোরস্ট্রোকে করে। যেতে হবে রিক্সায়। যেতে দেবেন না পরিবহন শ্রমিকরা।
তর্কাতর্কি,হাতাহাতি। ছাত্রীর পোষাকে কালি ছুড়ে মারা। অসহায় ছাত্র-ছাত্রী। 'তোমাদের আন্দোলনের কারনে আমাদের জন্য কঠিন আইন হয়েছে। আজ পাইছি তোদের'! এই হল অবস্থা। অসহায় ছাত্রীর কালি মাখা দেশ। এটা চরম নৈরাজ্য। বিশৃঙ্খলা।
শ্রমিকদের দাবি আদায়ে যৌক্তিক আন্দোলন এদেশে হয়েছে। ভবিষ্যতে হবে। এটা অন্যায় নয়। কিন্তু তাঁদের অনৈতিক/ নৈতিক দাবি আদায়ের স্পর্ধা, নৈরাজ্য ও উস্কানি এটা কেউই মেনে নিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি আদায়ে দেশবাসীকে প্রতিপক্ষ করা, মানুষের স্বাধীন চলাচলে সর্বোচ্চ বাঁধা সৃষ্টি করা এটা বেআইনী। গর্হিত অপরাধ । ধর্মঘট ও হরতালের নিয়ম বহির্ভূত। এসব শ্রমিকরা দিনের বেলা যদি এমন করতে পারেন, রাতের আধাঁরে কী করবেন তা অকল্পনীয়।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশ অস্থিতিশীল করার রাজনৈতিক কুশিলবরাও এসবের সাথে জড়িত থাকতে পারেন। একবার যদি বিশৃঙ্খলা দানা বাঁধতে পারে, চরম অবস্থায় পৌছলে সরকারকেই চরম মূল্য দিতে হবে।
তাছাড়া শ্রমিকদের দাবি যদি ন্যায্য হয় তা পূরণের দায়িত্ব সরকারের এবং সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অথবা তাঁদের সাথে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
শ্রমিকদের বিশৃঙ্খল,নিষ্ঠুর স্পর্ধায় যদি ছাত্র,জনতা রুখে দাঁড়ায় তবে সে মাশুল কে দিবে? নিরাপদ পরিবহন শ্রমিকদের জীবনের দাবিতে অনিরাপদ রাষ্ট্র ও নাগরিক জীবন সেটা কাম্য নয়।
লেখক: অধ্যক্ষ, জগন্নাথপুর শাহজালাল মহাবিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]