সারা দেশে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থীরাসহ বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষার্থীরাও। রোববার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
জানা গেছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) এ ভর্তি পরীক্ষা হবার কথা ২৮ অক্টোবর। এদিকে ২৮ অক্টোবর ঢাকা সিটি কলেজেও একাডেমিক পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
২৬ ও ২৭ অক্টোবর নোবিপ্রবিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববারও (২৮ অক্টোবর) এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা রয়েছে। ২৭ অক্টোবর চবিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮, ২৯ ও ৩০ অক্টোবরও এখানে পরীক্ষা রয়েছে। এছাড়া ২৮ ও ২৯ অক্টোবর এবং ২ ও ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে, তারা বেকায়দায় পড়েছেন। রোববার (২৮ অক্টোবর) সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় শনিবার রাতের মধ্যেই চট্টগ্রাম যেতে হচ্ছে তাদের। নোয়াখালীর সোনাপুর, মাইজদী ও চৌমুহনীর বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি কাউন্টারেই শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। টিকিটের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পরও টিকিট পাচ্ছেন না অনেকেই। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর চট্টগ্রাম যাত্রা এখনও অনিশ্চিত।
এ অবস্থায় কিছু অসাধু পরিবহন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান টিকিটের দাম বৃদ্ধি করে আদায় করছে বাড়তি টাকা। নোয়াখালীর সোনাপুর ও মাইজদীর কাউন্টারগুলোতে টিকিটের দাম নাম না বাড়লেও চৌমুহনীর কাউন্টারগুলোতে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। ২০০ টাকার টিকিটের দাম নেওয়া হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও এখনও চট্টগ্রামের টিকিট পাইনি। বুঝতে পারছি না কীভাবে যাবো। আর কখন পরীক্ষায় অংশ নেবো। বিপুল সংখ্যক ভর্তিচ্ছুদের কথা চিন্তা করে প্রশাসনের এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত ছিল।’
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে রোববারের পরীক্ষা পেছানোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন নোবিপ্রবি প্রক্টর ড. এস এম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ধর্মঘট থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রবিবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের নিজস্ব বাসগুলো ক্যাম্পাস টু শহরে চলাচল করবে। আশাকরি তেমন সমস্যা হবে না।
অপরদিকে ধর্মঘটের কারণে রোববারের পরীক্ষা পেছানোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা সিটি কলেজ। যোগাযোগ করলে সিটি কলেজ অফিস থেকে বলা হয়, ‘পরীক্ষা পেছানোর ব্যপারে এখনো কোন নোটিস পাইনি।’
উল্লেখ্য, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিবহন ধর্মঘট চললেও যথাসময় দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এর আগে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়েছিল। ওই সময় ৯ অক্টোবর, বিকাল ৪টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জে ট্রাকচালক-শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার একই দাবি নিয়ে ফুঁসে উঠেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এরপরই এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।