পরিবার ও নৈতিক শিক্ষার বিকাশ - দৈনিকশিক্ষা

পরিবার ও নৈতিক শিক্ষার বিকাশ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

পরিবারকে একটি শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে মূল পীঠস্থান বলে বিবেচনা করা হয়। একটা শিশুর জন্ম ও বেড়ে ওঠার পাশাপাশি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাটাও বাবা-মা এবং পরিবারের গুরুজনদের দ্বারা হয়ে থাকে। শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবার সবচেয়ে বড়ো নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। স্কুলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একটি শিশু তার পরিবার থেকে যে শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হয়, তা তাকে পরবর্তী জীবন পরিচালনার জন্য পথনির্দেশ দিতে থাকে। সোমবার (২৮ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, একটা সময় আমাদের দেশে যৌথ পরিবার দেখা যেত ব্যাপক পরিমাণে। মূলত এই যৌথ পরিবার প্রথা সৃষ্টির শুরু থেকে চলে আসা একটি সামাজিক ব্যবস্থা যা মানুষের মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। হাজার বছর ধরে চলে আসা এই সামাজিক ব্যবস্থা পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বহু আগেই ভেঙে পড়েছে। তাদের ভোগবাদী প্রবণতা মানুষকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে পুরোপুরি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আমাদের দেশে যৌথ পরিবার আজকাল যতটুকু চোখে পড়ে সেটাও ধর্মকে মেনে চলার কারণে। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছে বৃদ্ধ পিতামাতাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতে। সুতরাং তাদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বস্তুবাদী চেতনার ভয়ানক থাবা আজ আমাদেরও গ্রাস করতে শুরু করেছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে ভুলে পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছি নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে।

একটা সময় ছিল মা-বাবা তার সন্তানকে নিয়ে সন্ধ্যায় পড়তে বসাতেন। তারা শুধু যে বইয়ের লেখা অক্ষরগুলো তাদের পড়াতেন বিষয়টা তেমন নয়। তারা সন্তানকে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষাও দিতেন। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কীভাবে মিশতে হবে, শিক্ষক ও গুরুজনের সঙ্গে আচরণ কেমন হবে বাবা-মা সেসব তালিম সন্তানকে দিতেন। সমাজের মুরুব্বিরা এক সময় শিশুদের নৈতিকতার শিক্ষা দিতেন। এখন আর এসব খুব একটা দেখা যায় না। সবাই বড়ো ব্যস্ত। কে শিখবে আর কে-ই বা শেখাবে! পুঁজিবাদী চক্রে আচ্ছন্ন হয়ে আমাদের বাবা-মাও তাদের সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি কাজের তাগিদে ঘরের বাইরে থাকেন তাহলে সন্তানকে সময় দেবেন কীভাবে? ফলে আমাদের সন্তানেরা একপ্রকার অভিভাবকহীন অবস্থায় বেড়ে উঠছে। আর এই সুযোগে পশ্চিমের নগ্ন থাবা আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে।

পরিবারের পর শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। কথা ছিল, সেখানে পাঠ্যপুস্তক লেখা পড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষকেরা নীতি-নৈতিকতারও তালিম প্রদান করবেন। একসময় এটা খুব ভালোভাবেই হয়েছে। কিন্তু আজ আমাদের শিক্ষাঙ্গনে নীতি-নৈতিকতা চর্চার কোনো বালাই নেই। নীতিহীন শিক্ষাব্যবস্থা আজ আমাদের একটা গভীর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, যে শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর কাছে পিতার সমান তার কাছেই নির্যাতিত হতে হচ্ছে। ভাবা যায়! পথভ্রষ্ট হয়ে চলতে চলতে কোন অন্ধকার গুহামুখে চলে এসেছি আমরা!

আজকে আমাদের দেশের সন্তানেরা দেশের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে দম্ভভরে চলাফেরা করে সমাজে। ধরাকে সরা জ্ঞান করা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। একজন গরিব রিকশাওয়ালা এবং শ্রমজীবী মানুষ তাদের কাছে মানুষ বলেই বিবেচিত হন না। আমাদের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক সবাই আজ এই রোগের শিকার। শিক্ষাঙ্গনের সর্বত্র আজ অসহ্য ব্যথা। ওষুধ দেওয়ার জায়গা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। এর কারণ হলো, এক সময় শিক্ষার সঙ্গে যে নৈতিকতার সংযোগ ছিল, তাকে আমরা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা আজ উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে বের হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু মানুষ হতে পারছে না তারা।

আমাদের চিন্তাচেতনা এখন শুধু নিজেকে নিয়েই আবর্তিত হয়। সেখানে সমাজের অন্য কোনো মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। তাদের বিষয়ে ভাববার অবকাশও নেই আমাদের। ফলে আমাদের আচরণ হয় অনেকটা ‘যখন যে রকম ইচ্ছা’। আমরা সমাজে বহু মানুষ একসঙ্গে বাস করি বটে; কিন্তু পরস্পরের প্রতি ন্যূনতম সম্মানবোধ নেই। মানুষকে ভালোবাসতে শিখিনি আমরা। নিজেকে বড়ো মনে করতে গিয়ে সমাজের অপরাপর মানুষকে ‘ছোটো মানুষের’ কাতারে ফেলে তাদের সঙ্গে তেমন আচরণই করি। কিন্তু এটা কি একটা সভ্য সমাজের জন্য কাম্য হতে পারে? কতদিন চলবে এভাবে? এখনই যদি আমরা সংশোধন না হই, তাহলে অচিরেই এই সমাজের ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্বচক্ষে দেখতে পাব।

লেখক : আরাফাত শাহীন, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056600570678711