তিনি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক। পরীক্ষার্থীকে নিয়ে তিনি গেছেন কক্সবাজার ভ্রমণে। কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষার ফলাফলে ওই পরীক্ষার্থীই হয়েছেন প্রথম। শুধু তাই নয়, তাকে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দিয়ে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
এ ঘটনা ঘটেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ট্রেনিং একাডেমি বিভাগে পদোন্নতি পরীক্ষায়। রেলওয়ের চিফ ট্রেনিং অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। তাকে এ কাজে সহযোহিতা করেছেন ট্রেনিং অফিসার মো. আবুল কাশেম।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের নভেম্বরের দিকে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দিতে অফার লেটার পান মেহেরুন আক্তার ও মাহমুদা খানম। কিন্তু মাহমুদা খানম ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর যোগ দিলেও মেহেরুন আক্তার যোগ দেননি। পরে ২০১১ সালে মাহমুদা খানম ট্রান্সফার হন রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমিতে। ওই বছরে উচ্চমান সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পরীক্ষায় কৃতকার্য হন তিনি।
৭ বছর ধরে ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন মাহমুদা খানম। ২০১৮ সালে রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমির প্রধান সহকারী প্রণব চন্দ্র পাল অবসরে গেলে ওই পদে প্রায় এক বছর চলতি দায়িত্ব পালন করেন মাহমুদা খানম। পরে প্রধান সহকারী পদে স্থায়ীকরণের জন্য মাহমুদা খানম একাধিকবার রেক্টর বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের উত্তরে বলা হয় ওই পদে শূন্য না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া যাবে না। অথচ পদটি শূন্য ছিল।
এদিকে ২০০৪ সালে অফার লেটার পাওয়া মেহেরুন আক্তার অফিস সহকারী পদে যোগ দেন ২০১১ সালে। যেটি নিয়ম বহির্ভূত। এরপরও যোগদানের ৫ বছরের মধ্যে তাকে উচ্চমান সহকারী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ট্রেনিং অফিসার মো. আবুল কাশেম ও রেক্টর মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে তিনি পদোন্নতি লাভ করেন।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রেনিং একাডেমির প্রধান সহকারী পদে নিয়োগ দিতে একটি পরীক্ষা কমিটি গঠন করেন রেক্টর আনোয়ার হোসেন। এতে তাকে আহ্বায়ক রেখে কমিটির সদস্য করা হয় সিনিয়র ট্রেনিং অফিসার (ইঞ্জিনিয়ার) লিয়াকত শরীফ ও ডিপিও মো. উল্লাহকে। এর কয়েকমাস আগে আনোয়ার হোসেন মেহেরুনসহ আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যান কক্সবাজারে। যেটি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ারও দেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর পদোন্নতি পরীক্ষার জন্য উচ্চমান সহকারী মাহমুদা খানম, মো. ওমর আলী ও মেহেরুন আক্তারকে বাছাই করা হয়। এরমধ্যে ফিডার পদে ৭ বছরের অভিজ্ঞতা আছে মাহমুদা খানম ও মো. ওমর আলীর। আর মেহেরুন আক্তারের অভিজ্ঞতা মাত্র ২ বছর। তিন দিন পর পদোন্নতি পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম হন মেহেরুন আক্তার, দ্বিতীয় হন মাহমুদা খানম।
অভিযোগ রয়েছে, ট্রেনিং অফিসার মো. আবুল কাশেমের সহযোগিতায় পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পান মেহেরুন আক্তার।
মাহমুদা খানম বলেন, পরীক্ষার দুইদিন আগেও মেহেরুন পরীক্ষা দেবেন না বলে জানিয়েছেন। কারণ তিনি জানতেন আমি এই পরীক্ষায় যোগ্য ও উত্তীর্ণ হব। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন হঠাৎ তিনি খুশি মনে পরীক্ষা দেবেন বলে জানান। এইচএসসি পাশ করা একটি মেয়ে পরীক্ষার দিন দেখলাম, প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। আগে প্রশ্ন না পেলে তা কখনও সম্ভব না।
পরীক্ষায় অনিয়মসহ স্বজনপ্রীতির বিষয়ে তদন্ত করতে রেলমন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ট্রেনিং অফিসার মো. আবুল কাশেম বলেন, আমি এখানে পরীক্ষা কমিটির কেউ না। সুতরাং তাকে প্রশ্নপত্র কিভাবে দেব ? এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
প্রশ্নপত্র পাওয়ার বিষয়ে জানতে মেহেরুন আক্তারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করে তার স্বামী আব্দুল মান্নান কল রিসিভ করেন। মেহেরুন আক্তারের স্বামী এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ের চিফ ট্রেনিং অফিসার রেক্টর মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।