পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের উদ্যোগে উদ্বেগ - দৈনিকশিক্ষা

পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের উদ্যোগে উদ্বেগ

নিজামুল হক |

প্রশ্নফাঁস চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে পরিবর্তন করা হবে পরীক্ষার পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপানো ও বিতরণের প্রয়োজন হবে না তেমন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ছাপানো প্রশ্নপত্রের বদলে সব শিক্ষা বোর্ডের জন্য কেন্দ্রীয় প্রশ্নব্যাংক তৈরি করা হবে। এই প্রশ্নব্যাংক থেকে পরীক্ষার দিন কেন্দ্রীয়ভাবে কমান্ড দিলে সকাল সাড়ে ৯টায় ডিভাইসে ভেসে উঠবে প্রশ্নপত্র।

শুধু তাই নয়, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হবে এমসিকিউ বাতিলের চিন্তা যা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর উদ্বেগের বড় কারণ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে অভিভাবকরা নিশ্চিত হয়েছেন পরীক্ষা পদ্ধতির বড় পরিবর্তন আসছে আগামী বছর থেকেই।

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন অভিভাবক। একই মত শিক্ষকদেরও। আর শিক্ষাবিদদের মতে, গবেষণা না করে এডহক ভিত্তিতে সমাধান দেওয়ার কারণে ভবিষ্যত্ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আগামী বছর থেকে আবারো নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যা এখন দশম শ্রেণি পড়ুয়াদের উদ্বেগে ফেলছে। জসিম আহমেদ রাজধানীর একটি স্কুলে এবার দশম শ্রেণিতে পড়ছে। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। সে জানায়, প্রতিনিয়তই খবরের কাগজে বা টেলিভিশনে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের খবর প্রকাশ পাচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যেভাবে পরীক্ষা দিচ্ছি এখন যদি তার বড় ধরনের পরিবর্তন হয় তাহলে নিশ্চিত পরীক্ষায় খারাপ করবো। এ কারণে শঙ্কায় আছি।

ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের অভিভাবক সালমা জামান বলেন, পদ্ধতি পাল্টানোর খবর শুনছি। অনেকটা ছেলেখেলার মতো ব্যাপার। পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষামূলক এত সিদ্ধান্ত আমাদের শুধু নয়, অস্থির করে ফেলেছে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে। এ খবরে আমরা কেউ স্বস্তিতে নেই। সরকার প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে না পেরে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করে দিচ্ছে, যে কারণে বিপাকে পড়তে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রশ্নফাঁস চক্রের তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

২০১২ সালের পর থেকে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় অন্তত ৮০টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চার বছরে বিভিন্ন পরীক্ষায় ৬৩টি বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। গত ডিসেম্বরে যুক্ত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে চালু হয় ৫০ নম্বরের এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, বাকি ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। ৫০ নম্বরের এমসিকিউ উত্তর দিতে প্রতি বিষয়ে ৫০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে নির্ধারিত ৫০০ নম্বরের এমসিকিউ তুলে দেওয়া হয়। পুরো বই থেকে এমসিকিউ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। পরে এমসিকিউর পূর্ণ নম্বর কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়।

সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হওয়ার পর অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া শুরু ২০০৯ সালে। ২০১০ সালে এসএসসিতে দুটি বিষয়ে সৃজনশীল দিয়ে দেশে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়। তখন সৃজনশীল বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেওয়া হতো অভিন্ন প্রশ্নপত্রে। কিন্তু ২০১৪ সালে ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসএসসি ও এইচএসসিতে শুরু হয় বোর্ডভিত্তিক আলাদা প্রশ্নপত্র। এরপর চার বছর না যেতেই আবার প্রশ্ন পদ্ধতি পরিবর্তন। এভাবে আট বছরে তিনবার প্রশ্ন পদ্ধতি পরিবর্তন করা হলো।

অন্যদিকে মাধ্যমিকে এমসিকিউ বাতিলের চিন্তাভাবনা চলার মধ্যেই হঠাত্ করে প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে প্রাথমিকের এমসিকিউ অংশ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা নিয়েই নানামুখী সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে না পেরে এমসিকিউ পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। সারা পৃথিবী যেখানে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয় সেখানে আমরা এটা পারছি না।

আলিমুল হক নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানিয়েছেন, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করতে হলে অনেক চিন্তাভাবনার প্রয়োজন। পঞ্চম শ্রেণিতে যারা পড়ে তারা শিশু। এভাবে পদ্ধতি পরিবর্তন করলে শিশু মস্তিষ্কের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। মনে হলো আর বাতিল করে দিলাম এমন সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার কথা বলেন এ অভিভাবক। একটা বিষয়ে সমস্যা হলো, আর আমরা কোনো গবেষণা না করেই বাতিল করে দিলাম- এটা হতে পারে না। পরীক্ষা পদ্ধতি বদলাতে প্রয়োজন স্থিতিশীলতা।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে তিনটি পরিবর্তন আনবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রথমটি হলো এ পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) থাকবে না। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) থেকে জানানো হয়, এ বছর এই পরীক্ষার ৬টি বিষয়ের শতভাগ প্রশ্নই হবে কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতিতে (সৃজনশীল)। এর আট দিনের মাথায় পরীক্ষা সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত নিল মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী সামনের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কোনো বিষয়েই এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে না। এর আগে বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ২৪, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৫০, বিজ্ঞানে ৫০ এবং ধর্ম বিষয়ে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। এখন নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এমসিকিউয়ের পরিবর্তে সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। পাশাপাশি প্রশ্নপত্রের গোটা কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হবে।

এসব নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশুদের অভিভাবকরা।

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034060478210449