বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তে উল্রসিত বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। সারাবিশ্বের মতো করোনার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। সে কারণেই সরকার উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর। তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে তখনও এ বিষয়টি নিয়ে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকবে।
এটা ‘অ্যাভেইলঅ্যাবল’ পদ্ধতির মধ্যে একটা সল্যুশন (সমাধান) হয়েছে। তবে ‘বেস্ট সল্যুশন’ হয়নি। এই সিদ্ধান্তে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। আবার বিচলিত হওয়ার মতো কিছুও নেই।
প্রয়োজনে মোট শিক্ষার্থীকে ছোট ছোট ভাগ করে ১ থেকে ২ মাস ধরে পরীক্ষা নেয়া যেত। করোনার বাস্তবতার পরেও যদি সবই চলে তাহলে পরীক্ষাও নেয়া যেত।
অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী আরও বলেন, করোনার কারণে কিছু বাস্তবতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। ‘ভার্চুয়াল এডুকেশন’ এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আবার বেশ কিছু জায়গায় স্বল্প পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষেও শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন। তবে তারা আমাদের মতো সাড়ে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর এভাবে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি চিন্তাও করতে পারে না।
সেই বাস্তবতায় হয়তো সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কারণ এত সংখ্যক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আরও তিনগুণ অভিভাবক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আসত। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই সিদ্ধান্তে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই, আবার চিন্তিত হওয়ার মতো কিছুও নেই।
আজাদ চৌধুরী আরও বলেন, এই সিদ্ধান্তের প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর পড়বে। যার হয়তো ফলাফল অনেক ভালো করার কথা ছিল, সে সেই সুযোগটিই পাচ্ছে না। আবার অনেকে এসএসসি থেকে এইচএসসিতে বিভাগ পরিবর্তন করেছে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াটাতো খুবই কঠিন হয়ে যাবে। করোনা মহামারীর মধ্যে রুটি-রুজির জন্য জীবন-যাপন অনেকটা স্বাভাবিক করতে হয়েছে।
সরকারকে সেটা ভাবতে হয়েছে। আর শিক্ষায় যেহেতু প্রভাবটা দুই, চার, দশ বছর কিংবা বিশ বছর পরে পড়বে তাই সেটা হয়তো সেভাবে ভাবা হয়নি। কিন্তু সবই যদি স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে পরীক্ষাটাও নেয়াই যেত।
একটি ঘটনা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক ভিসি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় দেশ স্বাধীনের পর ‘অটো প্রমোশন’র জন্য শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ আন্দোলন করে।
সেই সময়েও কিন্তু ‘অটো প্রমোশন’ দেয়া হয়নি। সে সময় বঙ্গবন্ধু এসে তার গাড়িতে করে তৎকালীন ভিসিকে নিয়ে যান। সে কারণেই এই সিদ্ধান্তের বিষয়েও হয়তো আরও ভাবা যেত।