নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে। গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে এ আবেদন জানান উক্ত কেন্দ্রভুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। উক্ত কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদেরকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় মর্মে অভিযোগ করেছেন তারা।
জানা গেছে, ডোমার উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পরীক্ষা কেন্দ্র মোট ৬টি। উপজেলা সদর থেকে চিলাহাটির দূরত্ব ২০ কিলোমিটার হওয়ায় এখানে জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার দুইটি করে কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো চিলাহাটি সরকারি কলেজ, চিলাহাটি মার্চেন্টস উচ্চ বিদ্যালয় এবং চিলাহাটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চিলাহাটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ তিনটি পরীক্ষারই ভেন্যু কেন্দ্র ছিল। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভেন্যু কেন্দ্র বাতিল করায় চিলাহাটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিনটি পরীক্ষারই পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
ডোমার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাকেরিনা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, উক্ত কেন্দ্রের সচিব এবং পরীক্ষা পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা পরীক্ষার্থীদের সাথে কঠোর আচরণ করায় পরীক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে; এ কারণে তারা ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারে না মর্মে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার (শাকেরিনা বেগম) কাছে মতামত চেয়েছেন বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানান এ শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি কি মতামত দেবেন সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
অভিযোগকারী প্রধান শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কেন্দ্রটি অন্যত্র সরানোর জন্য জোর দাবি জানান। সেটি সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে বাদ দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কেন্দ্রটি পরিচালনার কথাও বলেন। তারা মনে করেন চিলাহাটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের সাথ কঠোর আচরণ করায় তাদের ফলাফল খারাপ হচ্ছে। পরীক্ষায় কিছুটা ছাড় দেয়া উচিৎ বলে তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে যে পরিবেশ দরকার তা চিলাহাটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে রয়েছে। পরীক্ষার্থীরা অবাধ সুযোগ পেলে পরিবেশ নষ্ট হয়, ভালো শিক্ষার্থীরা গোলমালের কারণে পরীক্ষা খারাপ করে ফেলে।
তারা আরও জানান, প্রতি পরীক্ষায় কিছু সংখ্যক অভিভাবক থাকে যারা অবাধ সুযোগের আশা করে; কিন্তু কেন্দ্র সচিব মধ্যম পন্থা অবলম্বন করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উস্কানিমূলক নানাবিধ কথা বলে বেড়ান যা সত্য নয়। মূলত কেন্দ্র স্থাপনের শুরু থেকেই একটি পক্ষ কেন্দ্রটি অন্যত্র স্থানান্তরের পাঁয়তারা করে আসছে বলে এ অভিভাবকদের অভিযোগ।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে চিলাহাটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ইউএনওর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিআরডিপি’র উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা অবনী মোহন রায়। এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সব পরীক্ষায় পুরো সময় ধরে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ পাবলিক পরীক্ষার কোনো বিধি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রথম ৩০ মিনিট নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের সামলানো অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিব মো. আইউব আলী দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘অত্র কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। পরীক্ষার্থীদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে যাবতীয় ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ অনেকের কাম্য নয়, তারা চান ৩ ঘণ্টাই পরীক্ষার্থীরা শেয়ার করে পরীক্ষা দিবে। এমনকি প্রত্যবেক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে। অত্র কেন্দ্রে এহেন অনৈতিক সুযোগ না থাকায় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দেও তারা তৎকালীন ইউএনওর কাছে একই ধরনের অভিযোগ করেছিলেন।’