পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের বৈরি আচরণ: এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার হুমকি - দৈনিকশিক্ষা

পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের বৈরি আচরণ: এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার হুমকি

মতিউল আলম, ময়মনসিংহ থেকে |

এসএসসি পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের বৈরি আচরণে কষ্ট পেয়ে ও অপমানিত বোধ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন এক ছাত্রী। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার। পরীক্ষার্থীর নাম পূর্ণতা পাল তিসি। ৬ ফেব্রয়ারি বিকেল ৪টা ২৪ মিনিটে স্ট্যাটাসটি দেয়। এপর্যন্ত ২৬৬ লাইক, ১৫১ শেয়ার ও ২২৫ কমেন্টস করেছেন। তিসির তুষার ভাই শুক্রবার রাতে টেলিফোনে দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন, বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হয়েছে। 

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া বাজারের ব্যবসায়ী হারান পালের মেয়ে তিসি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা লিখেছে তা হুবহু তুলে ধরা হলো,

"শিক্ষিত মানুষদের শিকার হয়ে বসবাস করাঃ ৭ম শ্রেনীতে আমার নাম স্কুলে সবার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার ঘোষণা করা হয় বার্ষিক পরীক্ষায়, কিন্তু পরের দিন এই প্রথম থেকে আমি বঞ্চিত। সেই স্থান দখল করল একজন অন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মেয়ে, যে ২য় হয়েছিল। পরে জিজ্ঞাস করলে উল্টাপাল্টা অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়। কারণ আমার বাবা এতো শিক্ষিত ছিলো না। কিন্তু ওই দিন আমিই না করেছিলাম বাবাকে কিছু বলতে। মেনে নেই সব।

আত্মহত্যার হুমকি দেয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীর স্ট্যাটাস | ছবি: ফেসবুক

৮ম শ্রেণীর জেএসসি পরীক্ষায় আমার আশেপাশে ৩/৪ জনই ছিলো শিক্ষকের মেয়ে (আমি সবার মাঝেই ২য় ছিলাম).. তাই ওইভাবেই সিটটাও পরে। সামনে ছিল শিক্ষকের মেয়ে পেছনে ছিল প্রিন্সিপালের মেয়ে, পাশেও ছিল শিক্ষকের মেয়ে। দেখাদেখির অভ্যাসটা ছিল না। খুব সমস্যায় না পরলে দেখাতামও না। পাশের কয়েক জন দেখাদেখি করার পরেও স্যাররা কিছু বলেনি, কারণ তাদের বেশিরভাগই শিক্ষকের সন্তান।

আত্মহত্যার হুমকি দেয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীর স্ট্যাটাস | ছবি: ফেসবুক

আমার পেছনে যে প্রিন্সিপালের মেয়ে ছিল সে আমাকে ডাক দেয়। তখন পরীক্ষা শেষ হতে আর ১৫ মিনিট। আমি পেছনে তাকাতেই আমার খাতাটা চলে গেল স্যারের কাছে, লেখা বাকি ছিল, তাই কান্না করছিলাম তারপরও দেয় নি। কিন্তু যে ডাক দিল তার খাতাটা কিন্তু নিলো না। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে গেলাম। আমার কান্না আমার বাবা সহ্য করতে না পেরে প্রধান শিক্ষককে সব বলে। তারপর এইটা নিয়ে দরবার হয়। কতো কি! সব শেষে আমার বাবাকেই এইসবের কারণে ক্ষমা চাইতে হয়। কারণ কোনো শিক্ষকই চায় না কোনো শিক্ষকের নামের উপর কলঙ্ক লাগুক।

পরের দিন গার্হস্থ্য পরীক্ষায় এক স্যার এসে আমাকে যা তা বলে যায়, আমাকে পরীক্ষা দিতে দিবে না, আমি কিভাবে পাস করি দেখে নিবে, সবার সামনে পরীক্ষার সময় দাঁড়া করিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলে গেল। (যেই স্যার আমার খাতা নিছিলো আগের দিন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক) আমি ওই মন নিয়েই পরের আর ১টা পরীক্ষা দিয়ে জেএসসি পরীক্ষা শেষ করলাম।

এখনো মনে আছে ২ দিনই পরীক্ষা ভালো হবার পরেও কান্না করে করে বাসায় আসি। তারপর আমার রেজাল্ট আসলো ধোবাউড়া বিন্দুবাসিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫ জনের এ+, আর বৃত্তি আসল ২ জনের। তার মাঝে আমি একজন। তারপর চলে গেলাম ময়মনসিংহ। ১ বছর থাকলামও ময়মনসিংহ। কিন্তু বাবার ইচ্ছা ছিল, ধোবাউড়া থেকেই এসএসসি দিয়ে যেন যাই। ওই ইচ্ছার জন্য থেকে গেলাম ধোবাউড়াতেই।

আমি এইবার (২০২০ সালে) এসএসসি দিচ্ছি। আমি কখনো কল্পনাও করিনি ওইরকম ঘটনা আবার ঘটতে পারে। আমার সিট যেখানে পরার কথা ছিল ওইখানে পরেনি। মাঝে একজনকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার সামনের জনের রোল নাম্বার শেষে ৮২, আর আমার ৮৩, আর আমার পেছনের মেয়ের রোল ৬৯। কিন্তু সম্পূর্ণ হলের সিট ঠিক। আমি কয়েকজন স্যার মেডামদের বললাম যে আমার সিট তো ওর সামনে থাকবে এমনভাবে কেন? স্যাররা বলল এইসব সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। সব মেনেও নিতে হলো।

প্রথম পরীক্ষা দেই ভালোভাবেই। ওইদিন যেখানে সিট পরে পরের দিন গিয়ে দেখি আমার সিট ওইখানে নেই। একটু পিছিয়ে গেছে। আর ২য় পরীক্ষার দিনই হলের কেন্দ্রসচিব পরীক্ষার সময় আমাকে দেখিয়ে ওই স্যারকে (যে স্যার আমার গার্হস্থ্য পরীক্ষায় সবার সামনে অপমান করে) বলেন এইটাই হারানের মেয়ে। আমি কিছুই বুঝলাম না কেন এইভাবে বললেন।

বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৩য় পরীক্ষায় হলে গিয়ে দেখি আমার সিট আরেক বেঞ্চ পেছনে। আমি আমার সিটেই গিয়ে বসলাম। বুঝলাম আমার পেছনের সিটটা সামনে চলে গেছে, আর আমি আমার ওই বন্ধুর সামনেই চলে গেলাম। এতে আমি কিছুই বলিনি, বরং একটু খুশিই ছিলাম। কারণ সে আমার বিদ্যালয়েরই ছিল। তারপর সাইন এর সময় আমার সিট উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে এইটা স্যার বুঝেও কিছু বলেনি। কিন্তু অবাক হলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই ৩/৪ জন স্যার চলে এসে জিজ্ঞাসা করতে লাগল কে এই সিট চেঞ্জ করেছে। কার এতো বড় সাহস। একজন স্যার তো সরাসরি আমাকে বলল এই মেয়ে বলো কে এই সিট চেঞ্জ করেছে। আমি বললাম, আমি তো জানি না স্যার। আমি একদিন এক এক জায়গায় পরীক্ষা দিচ্ছি, ১ম দিন এক জায়গায় আরেকদিন আরেক জায়গায় আজকে আবার চেঞ্জ।

স্যাররা আর কিছু না বলে বেঞ্চ আগের জায়গায় রেখে দিল। তারপর একটু পর পর যেই স্যারই আসে তাদেরকেই এই বেঞ্চ পাল্টানোর কাহিনি বলে। এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও বাদ দিলো না। আর ওই স্যারটাও (যে আমাকে জেএসসিতে সবার সামনে অপমান করেছিল) আসে। এসে বলে ওদের কেন পরীক্ষা দিতে দিচ্ছেন? তখনই কেন বের করে দিলেন না? কথাগুলো হজম করে কিভাবে পরীক্ষা দিলাম আমি আর আমার সৃষ্টিকর্তাই জানেন। আমার না এখন একটাই কথা জানা ইচ্ছা! কোনো স্যার বলতে পারবে আমি তাদের মুখের উপর কিছু বলছি বা তাদের কথা শুনিনি। আর পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগে হলের দরজাই খোলা হয় আর আমরা সাধারণত মানুষ কিভাবে এই বড় কাজটা করব? আমার দোষটা কি ছিল? ও বুঝতে পেরেছি ওই যে জেএসসিতে তে আমার বাবা ওই কারণটার জন্য রাগারাগি করেছিল বলে? দরবার হয়েছিল বলে? আমার বাবাই তো অপমানিত হয়ে এসেছিল ওইদিন। তারপরও কি আমার উপর থেকে আপনাদের রাগ কমে নি?

আমার না কতো আশা ছিল কতো কি করব। কিন্তু আমি এইটাও জানি এই এসএসসি রেজাল্টটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার এই কথা কেউ শুনবে না জানি। কিন্তু যখন বড় হয়ে কিছু করব,তখন সবাই বলবে এই আমাদের এলাকার ছিল। এই তো আমার ছাত্রী ছিল। সাংবাদিকরা তাদের পত্রিকায় আমার ছবি দিয়ে বলবে এই মেয়ে আমাদের ধোবাউড়ার গর্ব। কিন্তু যার শুরুটাই আপনারা এইভাবে শেষ করে দিচ্ছেন,তার থেকে কিছু আশা করাটাও একটা কৌতুকের মতো শুনায় না? এখন আসি আরেকটা কথায়।ওই স্যার, (যে স্যার আমাকে জেএসসিতে বলেছিল) ওই স্যারের স্কুলের সিট আমাদের পাশে।

এইটা কথা নয়,কথা হলো আজকে ওই স্যারের এক ছাত্রের থেকে মেডাম স্মার্ট ফোন পায়! ওইটা কি কোনো অপরাধ ছিলো না? আর ওইটা তো আর ইউএনও স্যারকেও বলা হয় নি। কিন্তু কেন? আর গত বাংলা ২য় পরীক্ষায় এক বন্ধুর অবজেক্টিভ এর উত্তরপত্র সময় শেষ হওয়ার পরে নিয়ে যায়। কারণ সামনে আরও অনেক স্যাররাই ছিল। তাই তাকে বাড়তি সময় দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না বলে খাতা নিয়ে যায়।আর মেডাম তার পরিচিত বলে ৭ টা অবজেক্টিভ এর উত্তর তার থেকে জেনে তার উত্তরপত্রে দাগিয়ে দেয়।

ধোবাউড়ার সকলের কাছে আমার প্রশ্ন এইসব কি অপরাধ ছিল না? আমি কিছু না করেও আমাকে এতো কথা হজম করে নিতে হলো, কেন? প্রত্যেকটা দিনই কি এইভাবে আমাকে অপমান সহ্য করে নিতে হবে? এইভাবে চললে ভালো রেজাল্ট কেন? আমি তো পাসই করতে পারব না। আমি অপমানিত হচ্ছি মানলাম, এইবারও কোনো বিষয় নিয়ে আমার বাবা যদি অপমানিত হয় আমি এই পোস্ট এ লিখে রাখছি আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে এই ধোবাউড়ার শিক্ষিত মানুষগুলো।"

 

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0083239078521729