কৃত্রিম ফুসফুস তৈরি করে আলোচনায় এসেছে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষার্থী। রোববার (১৬ জুন) জাতীয় পর্যায়ের স্কিলস কম্পিটিশন-২০১৮ তে রাজশাহীর ওই তিন শিক্ষার্থীর কৃত্রিম ফুসফুস প্রদর্শিত হয়। তাদের এই উদ্ভাবনী অবাক করেছে সবাইকে।
রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রনিক্স ডিপার্টেমেন্টের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রুমান্তা হোসেন মৌ, নাইমা আক্তার আঁখি ও বিপাশা খাতুন। তারা বলছেন, তাদের এই উদ্ভাবনী সরকারি পর্যায়ে কাজে লাগালে ভবিষ্যতে চিকিৎসা আরও উন্নত করা সম্ভব হবে। আগামীতে আরো নতুন কিছু উদ্ভাবন করারও আগ্রহ রয়েছে তাদের
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ক্লাসের ফাঁকে তিনজনে মিলে মানুষের জন্য কৃত্রিম ফুসফুস বানিয়েছে। যেটি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই উপযোগী ও সাশ্রয়ী একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। তারা জানায়, এই যন্ত্র রোগীর অবস্থা অনুযায়ী নলের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে সংযুক্ত করা সম্ভব। এখানে আলাদা করে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগবে না। কেননা প্রকৃতি থেকে এটি অক্সিজেন সংগ্রহ করবে। এদিক থেকে প্রচলিত ভেন্টিলেটরের তুলনায় এটি আধুনিক।
রুমান্তা হোসেন মৌ দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, প্রচলিত ভেন্টিলেটরের দাম সাত থেকে ১০ লাখ টাকা। আর আমাদের যন্ত্রটি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা সম্ভব।
রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত উদ্ভাবনী মেলায় কৃত্রিম ফুসফুস নিয়ে প্রথম হয় তারা। তার পরে শিক্ষার্থীরা আরও মনযোগী হয়ে প্রজেক্টটির উপরে গবেষণা শুরু করে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য অল্প খরচে মানুষের কল্যাণে কাজে আসে এমন কিছু আবিষ্কার করা। তারা পেরেছেও।
কৃত্রিম ফুসফুস নতুন কিছু নয়। এর আগে বাংলাদেশি তরুণ বিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিন টুম্পা কৃত্রিম ফুসফুস তৈরি করে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলেন। তবে টুম্পার সঙ্গে রাজশাহীর তিন কিশোরীর পার্থক্য হলো এরা কেউই বিজ্ঞানী না। তিনজনেই মূলত কলেজ শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গাইড টিচার আহসান হাবিব দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সাধারণত ফুসফুস অকেজো হলে মানুষ মারা যায়। মানুষ যখন একেবারে মুমূর্ষু পর্যায়ে তখন এই সাপোর্ট দেয়া হবে। তিনি বলেন, এই কৃত্রিম ফুসফুস প্রথম দিকে কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও নরওয়েতে অবিষ্কারের পরে স্বাস্থ্য সেবায় ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে দেশের কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতাল কৃত্রিম ফুসফুস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদেশে কৃত্রিম ফুসফুস যন্ত্রটি অনেক বড়। তার দামও অনেক বেশি। আর যন্ত্রটি বহন করা যায় না। কোন হাসপাতালে রেখে রোগীদের সেবা দেয়া হয়। আর আমাদের এই যন্ত্রটি কম্পিউটারের সিপিউর সমান। যা অ্যাম্বুলেন্সে ব্যবহার করা সম্ভব। জরুরি অবস্থায় এই সেবাটি দেয়া গেলে প্রাণহানি কমবে।
স্কিলস কম্পিটিশন তিনটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, পরে বিভাগীয় পর্যায়ে এবং সবশেষে জাতীয় পর্যায়ে। জাতীয় পর্যায়ে রাজশাহীসহ সারাদেশের ১৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২৫১টি উদ্ভাবনী নিয়ে অংশগ্রহণ করে। রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ১২টি উদ্ভাবনী প্রদর্শিত হয় এই আসরে। আর ৬৪ দশমিক চার নম্বর পেয়ে চতুর্থ হয় রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।