করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে সাধারণ ছুটিও বাড়ছে। বাড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিও। এই কারণে পাঁচটি পাবলিক পরীক্ষা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। স্থগিত রাখা হয়েছে এইচএসসি, আগামী নভেম্বরে নির্ধারিত পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুটি সমাপনী এবং আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। যুক্ত আছে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফল। যদিও প্রস্ততি শুরু হয়েছে চলতি মাসের শেষদিকে ফল প্রকাশের।
পরিস্থিতির স্বাভাবিক হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে নেয়া হবে স্থগিতরাখা এইচএসসি পরীক্ষা। সেটা জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টম্বর এমনকি অক্টোবর-নভেম্বর মাসেও হতে। পিছিয়ে যেতে পারে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। আর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুই সমাপনী বা পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা সময়মতো নেয়া হলেও কাটছাঁট করতে হবে সিলেবাস। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন এসব তথ্য।
করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ৪১ দিন বন্ধ রাখার পর এসএসসি পরীক্ষার ফল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ফল প্রকাশের লক্ষ্য নিয়ে এই কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আগামী ৩০ মে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকছে। এতে আড়াই মাস শ্রেণি কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থীরা দূরে আছে। কিন্তু এরপরও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়, সে ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হতে পারে। যদিও আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতোমধ্যে তিনটি বিকল্প নির্ধারণ করে রেখেছি। সেগুলো হচ্ছে : যদি জুনে কার্যক্রম শুরু করা যায় তাহলে ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে। আর যদি জুলাই বা আগস্টে শুরু করতে হয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কোন পথে পোষানো হবে, সেটা ধরে আরও দুটি বিকল্প করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি জুন মাসেই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যায় তাহলে সংকট আমরা সহজেই উৎরাতে পারব। কিন্তু জুলাই বা আগস্টে শুরু করতে হলে বা সেটি যদি সেপ্টেম্বরে গড়ায় তাহলে সংকট গভীর হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ছুটি বেড়ে গেলে বড় সমস্যা হবে জেএসসি পরীক্ষার। এ ক্ষেত্রে ১৫ মার্চ পর্যন্ত যতটুকু পড়ানো হয়েছে এবং পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যা পড়ানো যাবে তার মধ্যে নভেম্বরেই পরীক্ষা নিতে হবে। কেননা, এক বছর মেয়াদি সেশনের পরীক্ষা পেছানো যাবে না। আর এসএসসি-এইচএসসির সিলেবাস ছোট করা যায় না। গোটা বই থেকেই পরীক্ষা নেয়ার স্বার্থে প্রয়োজনে পরীক্ষা পেছাতে হবে। সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালের ফেব্র“য়ারিতে এসএসসি আর এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। হয়তো পেছাবে।
এদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সাধারণ ছুটি আর না বাড়লে মধ্যজুনে স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর চিন্তাভাবনা চলছে। ১৬ মে’র পর বোর্ডগুলো পরীক্ষার সময়সূচি তৈরি করবে। আর ছুটি বাড়ানো হলে ঈদের ছুটির পর সময়সূচি তৈরি করা হবে। সে ক্ষেত্রে জুনের শেষের দিকে শুরু হতে পারে এই পরীক্ষা।
চলতি মে মাসের শেষের দিকে বা ২৭ তারিখের পর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মে মাসের শেষের দিকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের চিন্তা আছে বলে জানান ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক ।
মাদ্রাসা বোর্ডও ডাকঘরের মাধ্যমে ওএমআর শিট পাঠাতে বলেছেন প্রধান পরীক্ষকদের। তারা মাদ্রাসা বোর্ডের বিভাগীয় আঞ্চলিক অফিসে পাঠাবেন। সেখান থেকে হাতে হাতে বোর্ড অফিসে কর্মকর্তারা নিয়ে আসবেন তা।
এসএমএসে ফল পাঠানোর চিন্তা : জানা গেছে, অন্যান্য বছরের মতো এবারও স্ব স্ব শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এসএসসি-সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে এসএমএস করে পরীক্ষা ফল জানা যাবে। তবে ঘরের বাইরে না গিয়ে কীভাবে সহজেই শিক্ষার্থীদের কাছে ফল পৌঁছে দেয়া যায়, সে বিষয়টি নিয়েও শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এসএমএসে ফল দেয়ার চিন্তা বোর্ডগুলোর আছে। কিন্তু সেটি এই মুহূর্তে কঠিন বলে মনে করছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, এই ছুটিতে প্রত্যেকের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ কঠিন কাজ। তবুও চেষ্টা চলছে।