সরকার থেকে চুক্তিভিত্তিক কোন নিয়োগ না পেয়েই পাঁচ বছর দুই মাস বেশি চাকরি করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ইসলাম শিক্ষার অধ্যাপক নাজির আহমেদ। তার আইডি নম্বর-২৪১২। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল নোয়াখালী বেগমগঞ্জ চৌমুহনী সরকারি এসএস কলেজ।
নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরে যাওয়ার দুই-তিন মাস আগেই পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরির জন্য নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরে আবেদন করেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নথি জমা দেন। এর পর ওই কর্মকর্তার অবসরোত্তর ছুটি মঞ্জুরের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু অধ্যাপক নাজির আহমেদ তার অবসরের বিষয়টি যথাসময়ে মাউশি অধিদপ্তরকে জানাননি।
মাউশির এক নথিতে বলা হয়েছে, একাডেমিক সনদপত্র অনুযায়ী অধ্যাপক নাজির আহমেদের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১ জানুয়ারি। এ হিসেবে ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে তার ৫৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। সে মোতাবেক তিনি পিআরএল (অবসরোত্তর ছুটি) গ্রহণ না করে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর এক মাস ২৭ দিন বেশি চাকরি করেছেন। উক্ত কর্মকালীন তিনি অতিরিক্ত গৃহীত অর্থ বাবদ ৩৪ লাখ ৮৮৩ টাকা ২৭ পয়সা গ্রহণ করেছেন। তিনি পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরির আবেদন দাখিল না করে বর্তমানে অবসর ভাতা মঞ্জুরের আবেদন করেছেন।
নোয়াখালী বেগমগঞ্জের উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কর্তৃক অতিরিক্ত গৃহীত সমস্ত অর্থ স্থানীয় হিসাবরক্ষণ অফিস হতে নির্ধারণ করে সমুদয় অর্থ ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা বা ফেরত প্রদান করে প্রমাণসহ বর্ণিত কর্মকর্তার পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরের আবেদন করার জন্য গত ১২ ডিসেম্বর নির্দেশনা জারি করে মাউশি অধিদফতর। এই সময়েও অধ্যাপক নাজির ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেননি।
অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) জাকির হোসেন দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরে যাওয়ার দুই-তিন মাস আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হয়। কিন্তু অধ্যাপক নাজির আহমেদ সেটি করেননি। এখন পেনশন পেতে হলে তিনি পাচ বছর দুই মাসে যে পরিমাণ অর্থ বেতনভাতা হিসেবে নিয়েছেন সেটি সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে। কারণ ওই টাকা অবৈধ।’
জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বিষয়টি প্রকাশ হলেও ওই শিক্ষক এবং মাউশি’র একটি চক্র ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্ঠা করে আসছিল। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে চতুরতার আশ্রয় নেয়া ওই অধ্যাপকও পেনশন ভাতা উত্তোলন করতে পারছিলেন না। এখন পাচঁ বছর দুই মাসের বেতনভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়া সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের অবসর ভাতা ছাড় করার চিন্তাভাবনা করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অধ্যাপক নাজির আহমেদ গতকাল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়ে অবসর ভাতা মঞ্জুরের আবেদন করেন। তিনি দাবি করেন, ‘ভুলবশত আমি পাচঁ বছর দুই মাস বেশি চাকরি করেছি। আমি সর্বশেষ যে কলেজে চাকরি করেছি, সেই কলেজ কর্তৃপক্ষও আমাকে কিছু জানায়নি। এজন্যই ভুলটি হয়েছে। তবে এই সময়ে যে টাকা-পয়সা ভোগ করেছি তার পুরোটাই সরকারি কোষাগারে জমা দেব।’