শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রেখে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। সোমবার (১৬ জুলাই) পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রেখে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত চলা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিক্ষক জানান, মাসখানেক আগে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার পদে যোগদান করেন পিজুস চন্দ্র দে। তাকে খুশি করতে সংবর্ধনার আয়োজন করেন জমিয়াতুল মোদার্রেসীন নামে একটি মাদরাসা সংগঠনের কয়েকজন নেতা। এ সংবর্ধনায় উপস্থিত হতে উপজেলার ৬৭টি মাদরাসার সকল শিক্ষকদের নির্দেশ দেন সংগঠনের জেলা সভাপতি আবদুল হান্নান আজিজী। শ্রেণি কক্ষের পাঠদান বন্ধ রেখে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তার সমর্থিত বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষকরা। সভাস্থলে ঝোলানো হয় ‘বাউফল উপজেলার সর্বস্তরের মাদরাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিজুস চন্দ্র দে মহোদয়ের সংবর্ধনা উপলক্ষে মতবিনিময় সভা’ লেখা ডিজিটাল ব্যানার।
জমিয়াতুল মোদার্রেসীন পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি ও বাউফলের বিলবিলাস নেছারিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হান্নান আজীজির সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কেশবপুর ফজলুল হক ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইউনুচ, পোনাহুড়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমান, নওমালা সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
শিক্ষকরা অভিন্নভাবে বলেন, ‘সোমবার পাঠদান বন্ধ রেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসতে বাধ্য করার কারণে আমরা মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে পারিনি।’ তবে অনুসারী না হওয়ায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেননি উপজেলার ২০টি মাদরাসা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। অভিযোগ আসে, এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জরুরী কাজে এসে ফিরে গেছেন কেউ কেউ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালিশুরী ইউনিয়নের ছিটকা গ্রাম থেকে আসা এক নারী বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি। ৩ ঘন্টা বসে থেকেও ইউএনও স্যারের দেখা পাইনি।’
অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে কালাইয়া রব্বানিয়া ফাজিল মাদরাসার এক শিক্ষক বলেন, ‘পাঠদান ব্যহত হবে ভেবে আমরা ইউএনও’র সংবর্ধণায় যাইনি। জমিয়াতুল মোদার্রেসীনের স্থানীয় নেতারা সব সময় এ ধরণের বিতর্কীত কর্মকান্ড করায় আমরা কখনো ওই সংগঠনটির কর্মসূচীতে যাই না।’
জমিয়াতুল মোদার্রেসীন পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি ও বিলবিলাস নেছারিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হান্নান আজিজী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের পাঠদানের দায়িত্ব দিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছি। কোন প্রতিষ্ঠানেই পাঠদান ব্যহত হয়নি।’