প্রকাশনাজগতে অনেক দিনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে করি, সন্তানদের পাঠাভ্যাসে আগ্রহী করতে অভিভাবকদের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। সন্তানরা সর্বাগ্রে মা-বাবার কাছ থেকে শেখে। তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো কিছু শুনতে শুনতে তাতে ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে ওঠে। একজন সন্তানকে শিশু বয়সে প্রথমেই কোনো বিষয়ে পড়তে বললে তা তার কাছে আনন্দহীন হতে পারে, বিরক্তির কারণ হতে পারে। কিন্তু সে যদি কোনো গল্প বা মজার বিষয় মা-বাবার কাছ থেকে শোনে বা তাঁরা তাকে পাঠ করে শোনান এবং তাতে সে আনন্দ পায়, তাহলে নিজে পড়ার প্রতি সে ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে উঠবে। পরিবারের নতুন প্রজন্মকে এ জন্য উৎসাহিত করতে হবে। পরিবারের উৎসাহ পেলে সন্তানরা একাডেমিক বইয়ের বাইরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশাল জগতের সন্ধান পাবে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আর জানা যায়, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বইমনস্ক জাতি ও জ্ঞান-সৃজনশীল সমাজ গঠনে রাষ্ট্রের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি নাগরিকদের নানা দায়িত্ব রয়েছে। একটি জাতিকে বইমনস্ক করতে হলে সবার আগে পরিবারকে বইমুখী করতে হবে। পরিবার থেকে সমাজে পাঠাভ্যাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
বইমনস্ক জাতি ও জ্ঞান-সৃজনশীল সমাজ গঠনে আন্দোলন জোরদার করতেই আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান পার্ল পাবলিকেশন্সের জন্ম হয়েছে। গত শতাব্দীর আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত পার্ল এখন প্রকাশনাজগতে গৌরবের অংশীদার। কেননা শুধু বই প্রকাশ নয়, আমরা পাঠক সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখতে চেষ্টা করি।
এ কথা ঠিক যে আগের থেকে এখন পাঠক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ বই কিনতে চায়, পড়তে চায়। অমর একুশে গ্রন্থমেলা, বিভাগীয় ও জেলা বইমেলাসহ বিভিন্ন বইমেলায় মানুষের আগ্রহ দেখলেই তা বোঝা যায়। তবে এটি যথেষ্ট নয়। পাঠাভ্যাস বৃদ্ধিতে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
পাঠক সৃষ্টিতে সামাজিক উদ্যোগ আগের চেয়ে বেড়েছে। এ তুলনায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ আশানুরূপ নয়। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরকে আরো গতিশীল করতে হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে বইয়ের সংযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। আমাদের সৌভাগ্য যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন লেখকই নন, তিনি বইমনস্ক মানুষ, সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। হয়তো তাই আমাদের প্রত্যাশাও বেশি। আশা করি, বইমুখী সমাজ গঠনে সরকারি উদ্যোগ বাড়বে।
পাঠাভ্যাস বৃদ্ধিতে গ্রন্থাগারগুলোকে আরো ভূমিকা রাখতে হবে। এ জন্য সরকারি গ্রন্থাগারের পাশাপাশি বেসরকারি গ্রন্থাগারকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মাধ্যমে যেসব গ্রন্থাগারকে যে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। অনুদান বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি হবে এবং সে প্রক্রিয়ায় দেশে নতুন নতুন পাঠাগারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।
লেখক : হাসান জায়েদী।