পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেশনজট মুক্ত করুন - দৈনিকশিক্ষা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেশনজট মুক্ত করুন

এমদাদুল হক সরকার |

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-সকল সমস্যা বিদ্যমান তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সেশনজট। ভয়াবহ সেশনজটে আটকে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট কিছুটা কমিয়ে আনলেও ভয়াবহ সেশনজটে পড়েছে দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। নিয়মানুযায়ী যেখানে অনার্সে চারটি এবং মাস্টার্সে একটি ব্যাচ থাকার কথা সেখানে সাত থেকে আটটি ব্যাচ রয়েছে।  এ অবস্থায় শিক্ষা ব্যয় বাড়ছে, শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে ঝরে পড়ছে অনেক সম্ভাবনাময় বছর। ফলে তাদের চাকরিতে ঢোকার সুযোগও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। অপচয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টা। এতে প্রতি বছর বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে মর্যাদা রয়েছে তার সমকক্ষ এখনো অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে পারেনি। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ, তীব্র প্রতিযোগিতা এবং দেশের উচ্চপর্যায়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া তরুণদের আধিক্যই তা বুঝিয়ে দেয়। ফলে এখানে শিক্ষাজীবন থেকে একটি দিনের অপচয়ই অনেক বড়। আর যেখানে অনেক চাকরিতে আবেদন করার সময়ই থাকে তিরিশ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে সেশনজটের চেয়ে বড় বাধা আর কি আছে? পশ্চিমা দেশের ছেলেমেয়েরা যেখানে বিশ-বাইশ বছরের মধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করে ক্যারিয়ার শুরু করছে সেখানে আমরা কেন এত পিছিয়ে পড়ছি? ওদের সেশনজট মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারে না?

বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের সাধারণ কিছু কারণ রয়েছে। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত রেষারেষি, দ্বন্দ্ব কিংবা ক্ষমতা প্রদর্শনের কারণে নির্দিষ্ট কোনো বিভাগ কিংবা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার নজির আছে। এছাড়া শিক্ষকদের রাজনীতিতে ছাত্রদের অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্দেশ কিংবা রাজনীতিকরা ছাত্রনেতাদের বিভিন্ন আন্দোলনের জন্যও দায়ী। তাই সেশনজট নির্মূল করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি সবার আগে বন্ধ করা প্রয়োজন। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে হতে হবে নিরপেক্ষ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত। তবে শুধু কি রাজনীতি শিক্ষকদের, সেশনজটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বিভাগগুলোতে সময়মতো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়া। সারাবছর অনিয়মিতভাবে ক্লাস নিয়ে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে সিলেবাস শেষ করার সংস্কৃতি এখানে নতুন নয়। সম্ভবত শিক্ষকতা পেশায় জবাবদিহিতার অবকাশ নেই। ফলে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে না অনেক বিভাগেই।

জীবনে উন্নতি করতে হলে সময়ের সদ্ব্যবহার করা অনস্বীকার্য। বিশ্ববিদ্যালয় হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-শিক্ষক প্রত্যেকেই দেশের মেধাবী সম্পদ। তাদের ওপর দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সময়ের সঠিক ব্যবহারের বিকল্প নেই। কিন্তু সেশন জটে ছাত্রদের সে মূল্যবান সময় অপচয় হচ্ছে। প্রায়শই দেখা যায় একটি বা দুইটি ক্লাসের জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে দিনশেষে কোনো ক্লাস না করেই বাসায় ফিরতে হয়। তীব্র প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার অভাবে, দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠগুলো পিছিয়ে পড়ছে। আর শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় ধ্বংস করে দিচ্ছে এই সেশনজট। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনীতি, তথা শিক্ষক- রাজনীতি নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে না পারলে, আর অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বাকি থাকা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভালো রকমের সেশনজটের মধ্যে পড়বে।

লেখক:শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033969879150391