ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হল। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এ হলে ১২০টি কক্ষে ৩৮৭ জন ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ এখানে আবাসিক ও দ্বৈতাবাসিক মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে থাকতে হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই হলে দুই হাজার ১৮৫ ছাত্রকে এটাচমেন্ট দিয়েছে। অর্থাৎ হলের সকল শিক্ষার্থী যদি হলেই থাকতো তাহলে এক সিটে থাকতে হতো পাঁচজন করে শিক্ষার্থী। অথচ এই তীব্র আবাসন সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। সোমবার (৮ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবদুল হাকিম আবির।
হলের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখা যায়, ছাত্রনেতাদের কিছু কক্ষ ছাড়া সব কক্ষেই ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি ছাত্র থাকছেন। ‘গণরুম’গুলোতে থাকছেন ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ছাত্র। চারজনের একটি কক্ষে থাকছেন ২০-২৫ শিক্ষার্থী। হলটিতে এ ধরনের ১০টি গণরুম আছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কক্ষে জায়গা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে হলের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুম ও ছাদের চিলেকোঠায় থাকতে হয়। এই হলের আটটি গণরুমে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী থাকেন। গণরুমগুলোতে অনেকে রাতে গাদাগাদি করে ঘুমাতে পারেন না, জায়গা পান না। অনেকেই ঘুমান পালা করে। কেউ ঘুমান রাতে আর কেউ দিনে। ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করে রাত কাটান অনেকে। কেউ কেউ একটু আরামদায়ক ঘুমের জন্য আশ্রয় নেন মসজিদে, কেউ বা হলের ছাদে, কেউ বা হলের বারান্দায়। হলের তৃতীয় তলার সরু বারান্দায় রাত কাটান কেউ কেউ। তীব্র গরম, গাদাগাদি, তার ওপর ছারপোকার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে তারা থাকেন হলের বারান্দায়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদ বলেন, আবাসন সংকট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সামগ্রিক সমস্যা। যেসব হলে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব হলে নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ সংকট সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৬২০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। এ কাজ শেষ হলে নতুন করে বিভিন্ন হলের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাবে।
এদিকে কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসন সংকট দূর করার কোনো উদ্যোগ না নিলেও শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত হলের দক্ষিণ পাশের ভবনের অর্ধেক অংশজুড়ে স্টাফ কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অংশে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হতে পারে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বিবরণীর তথ্যানুযায়ী হলের ৩৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে যাদের থাকার জন্য হলের এ অংশটি ব্যবহৃত হয়।
এ বিষয়ে হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ইমাম হাসান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করার জন্য বার বার হল প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। কর্মচারীরা হলের যে অংশটি দখল করে রেখেছে সে অংশটি ছাত্রদের বরাদ্দ দেয়ার জন্য হলের প্রাধ্যক্ষের বার বার অনুরোধ করা হলেও তিনি আমাদের কথা রাখেননি। হল প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবেই এ হলের আবাসন সংকট দূর হচ্ছে না বলে আমি মনে করি।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হলটিতে রয়েছে ৫তলা বিশিষ্ট দুইটি সংযুক্ত ভবন। হলটিতে দুইটি রিডিং রুম, একটি টিভি রুম, একটি পেপার রুম, একটি গেমস রুম, ক্যান্টিন ও মেস আছে। এ ছাড়া নিচতলায় মসজিদ, ডিবেটিং ক্লাব এবং স্বেচ্ছা রক্তদানের সংগঠন বাঁধনেরও কার্যক্রম রয়েছে।