এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় টানা তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে পাসের হার কমছে। এবার এই পরীক্ষায় দশ বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে গড় পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমেছে। আর ২০১৬ সালের তুলনায় কমেছে ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
পাসের দিক দিয়ে গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে এবার। ২০০৯ সালে পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এরপর এবারই পাসের হার এত কমলো। তবে এবার জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। এবার পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। বেড়েছে ৫ হাজার ৮৬৮ জন। সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নের কারণেই সার্বিক পাসের হার কমেছে বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
গতকাল রবিবার সারাদেশে একযোগে ২০১৮ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফল প্রকাশ করেন। এর আগে সকালে মন্ত্রী বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলের সার-সংক্ষেপ তুলে দেন।
প্রতিবারের মতো এবারো শহরের স্কুলগুলো ভালো ফল করেছে। পিছিয়ে পড়েছে গ্রামের স্কুলগুলো। গতকাল দুপুরে ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভালো ফল করা স্কুলগুলোতে বাঁধ ভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। বাদ্য বাজিয়ে, হাতে হাত রেখে নেচে-গেয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। বেলা দুইটায় স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হয় ফলাফল। বেলা দুইটায় ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়। মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও পরীক্ষার ফল জানা গেছে। প্রায় সকলেই মোবাইল এসএমএস ও ওয়েবসাইট থেকে ফল সংগ্রহ করেন। তবে এভাবে ফল জানতে গিয়ে ভোগান্তির শিকারও হতে হয় তাদের।
এবার ১০টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। পাস করে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৫ জন ছাত্র ও ৭ লাখ ৯১ হাজার ৮৫৯ জন ছাত্রী।
দেশের ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এসএসসিতে এবার ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪২৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করে ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৫ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ জন।
মাদ্রাসা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭ জন, পাস করেছে ২ লাখ ৩ হাজার ৩৮২ জন, পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছর ছিল ৭৬ দশমিক ২০ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ৩ হাজার ৩৭১ জন।
কারিগরি বোর্ডে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪ জন। পাস করেছে ৮২ হাজার ৯১৭ জন। পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ৪ হাজার ৪১৩ জন।
পাসের হারে রাজশাহী এগিয়ে
ঢাকা বোর্ড : এবার ঢাকা বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২০১ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ২ লাখ ৬ হাজার ৮৯৭ জন ছাত্র এবং ২ লাখ ২৫ হাজার ৩০৪ জন ছাত্রী। পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
রাজশাহী বোর্ড : এ বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৬২ জন। উত্তীর্ণ হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে ৮৫ হাজার ৮২২ জন ছাত্র এবং ৮১ হাজার ৪৩ জন ছাত্রী। পাসের হার ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ।
কুমিল্লা বোর্ড : কুমিল্লা বোর্ডে ১ লাখ ৮২ হাজার ৭১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ৩৭ জন ছাত্র এবং ৮০ হাজার ৮৬০ জন ছাত্রী। পাসের হার ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
যশোর বোর্ড : যশোর বোর্ডে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৯৯ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৬৮ হাজার ৮১৭ জন ছাত্র এবং ৭১ হাজার ৮৮২ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বোর্ড : এ বোর্ডে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৩৭ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৪৬ হাজার ৬০৮ জন ছাত্র এবং ৫৪ হাজার ৪২৯ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বরিশাল বোর্ড : এ বোর্ডে ১ লাখ ৩ হাজার ১২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯ হাজার ৫২০ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ৫১ জন ছাত্র এবং ৪০ হাজার ৪৬৯ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
সিলেট বোর্ড : এ বোর্ডে ১ লাখ ৮ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৬ হাজার ৭১০ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১৪৩ জন ছাত্র এবং ৪২ হাজার ৫৬৭ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
দিনাজপুর বোর্ড : এ বোর্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৭৬ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৭২ হাজার ৬১৬ জন ছাত্র এবং ৭২ হাজার ২৬০ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড : এবার মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭ জন পরীক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয় ২ লাখ ৩ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ৪৩৬ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ১ হাজার ৯৪৬ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড : এ বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৯১৭ জন উত্তীর্ণ হয়। এদের মধ্যে ৬১ হাজার ৮১৮ জন ছাত্র এবং ২১ হাজার ৯৯ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
জিপিএ-৫ এ এগিয়ে ঢাকা
এবার ঢাকা বোর্ডে ৪১ হাজার ৫৮৫ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ১৯ হাজার ৪৯৮, কুমিল্লা বোর্ডে ৬ হাজার ৮৬৫, দিনাজপুর বোর্ডে ১০ হাজার ৭৫৫, বরিশাল বোর্ডে ৩ হাজার ৪৬২, যশোর বোর্ডে ৯ হাজার ৩৯৫, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮ হাজার ৯৪ এবং সিলেট বোর্ডে ৩ হাজার ১৯১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
কয়েক বছরের পাসের চিত্র
২০০৯ সালে সার্বিক পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। পরের বছর ২০১০ এ তা বেড়ে হয় ৭৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এরপর ২০১১ সালে ৮২ দশমিক ৩১ শতাংশ, ২০১২ সালে ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে ৮৯ দশমিক ০৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। এছাড়া ২০১৪ সালে ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৮৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ছিল সার্বিক পাসের হার।
ভর্তি কার্যক্রম শুরু ১৩ মে
আগামী ১৩ মে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে। আবেদনের শেষ সময় ২৪ মে। এবারো একজন শিক্ষার্থী কমপক্ষে ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সূত্র জানিয়েছে। এর আগে গত ৩০ এপ্রিল ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী এবার শতভাগ আসন মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক