লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার অভিযোগে মানসিক ভারসাম্যহীন এক সাবেক কলেজ গ্রন্থাগারিককে পিটিয়ে হত্যা করে আগুনে তার লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় ধর্মান্ধরা। এ ঘটনাকে বর্বর, মধ্যযুগীয় আখ্যা দিয়ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) দৈনিক শিক্ষাডটকমে পাঠানো এ বিবৃতিতে এ দাবি জানান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার।
বিবৃতিতে ছাত্র নেতারা বলেন, 'একটি সভ্য সমাজে এভাবে মানুষ হত্যা অকল্পনীয়। সারাদেশের বিবেকবান মানুষ এতে হতবাক হয়ে গেছে। দেশে যেকোন অপরাধ সংগঠিত হলে তার বিচার প্রচলিত আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত। কিন্তু লালমনিরহাটের ঘটনায় দেখা গেলো আইনের কোন তোয়াক্কা না করে পিটিয়ে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে হত্যা করা হল। স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সরকারি দলের নেতাকর্মী কেউই এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ছিল তাদের অথচ পুরো ঘটনায় তারা ছিল নির্বিকার।'
বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, গত কয়েক বছরে রাস্তাঘাটে পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনা বৃদ্ধির কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
আরও পড়ুন : গুজব রটিয়ে কলেজের গ্রন্থাগারিককে পুড়িয়ে হত্যা
নেতারা বলেন, ‘আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় উগ্রতা বাড়ছে। পুঁজিবাদী শোষণের ফলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব চরমে পৌঁছেছে। করোনা মহামারি এ পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করেছে। ফলে এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে খাদ্য, চিকিৎসা, কাজের দাবিতে রাস্তায় নামবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরির জন্য ধর্ম-বর্ণ-জাতি ভিত্তিক উন্মাদনা তৈরি করা হয়েছে। পুঁজিবাদী শোষণ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রত্যেক সরকার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছে। সব অপরাধ ঢাকতে ঢাল হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, যুক্তিবাদী মন গড়ে তোলার বদলে বাড়ছে যুক্তিহীন উন্মাদনা। আর এই উন্মাদনার বলি হল লালমনিরহাটের মানসিক ভারসাম্যহীন গ্রন্থাগারিক।'
বিবৃতিতে নেতারা অবিলম্বে লালমনিরহাটের ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান এবং স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের নির্বিকারত্বের কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানান।