পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই আত্তীকৃত হচ্ছেন সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী - Dainikshiksha

সরকারিকরণপুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই আত্তীকৃত হচ্ছেন সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী

রাকিব উদ্দিন |

পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই আত্তীকৃত হচ্ছেন সরকারিকরণ হওয়া প্রায় ছয়শ হাইস্কুল ও কলেজের সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। সরকারি চাকরির সকল ধরনের নিয়োগেই কর্মীদের এই ধরনের ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে সরকারিকরণ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ব্যাপারে পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো প্রয়োজন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীর পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগবে। এতে শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন; তাদের মধ্যে অসন্তোষও সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি সরকারিকরণ ও আত্তীকৃত কার্যক্রমও বিলম্বিত হতে পারে। এজন্য বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নিষিদ্ধ বা বিতর্কিত, স্বাধীনতা ও সরকারি বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত, নাশকতা ও ফৌজদারি মামলার আসামি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী পরিবারের সদস্য- এমন অনেক ব্যক্তিই বিগত সময়ে নানা পন্থায় বেসরকারি স্কুল-কলেজে চাকরি পেয়ে থাকতে পারেন। ভুয়া সনদেও শিক্ষকতা করছেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষক, যা নিয়মিত ডিআইএ’র তদন্তে সনাক্ত হচ্ছে। এ ধরনের শিক্ষক-কর্মচারীদের পারিবারিক, ব্যক্তিগত ও শিক্ষাজীবন সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া উচিত। যেটা সকল সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রেই আবশ্যক।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘সরকারি ফ্রেশ নিয়োগের (নতুন নিয়োগ) ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা আইনকানুন দেখে বলতে হবে।’

জানা গেছে, ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠান ছিল ২৮৯টি। এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা দুই মেয়াদে দেশে ৭টি নতুন সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ সরকারিকরণ করা হয়েছে ৩৪৫টি বেসরকারি কলেজ। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে সরকারি কলেজ ৬৩৪টি। এর মধ্যে সরকারিকৃত ৩৪৫টি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার অপরদিকে দেশে পুরনো সরকারি হাইস্কুল ছিল ৩১৭টি। আর গত ৬-৭ বছরে ১১টি নতুন সরকারি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠাসহ সরকারিকরণ করা হয়েছে ২৬৪টি বেসরকারি হাইস্কুল। সরকারিকৃত হাইস্কুলগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় চার হাজার।

সরকারি চাকরিতে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে প্রার্থীর যাবতীয় তথ্য পুলিশ, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ভেরিফিকেশন (তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই) রিপোর্ট করাতে হয়। তাছাড়া প্রার্থীদের মেডিকেল টেস্টও করাতে হয়।

কিন্তু ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা-২০১৮’তে শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যাপারে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আত্তীকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন হওয়ার তো কথা। হচ্ছে কিনা আমি নিশ্চিত নই। এটা পিএসসি (সরকারি কর্মকমিশন) করছে।’

২০০৯ সাল থেকে আত্তীকরণ হওয়া যেসব স্কুল-কলেজের শিক্ষকের চাকরি নিয়মিতকরণ সম্পন্ন হয়েছে তাদের ব্যাপারে পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি এবং নতুন আত্তীকরণ বিধিমালায়ও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি সে তথ্য তুলে ধরে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নলেজে (অবহিত) ছিল না। আগামীতে বিষয়টি বিবেচনায় থাকবে।’

ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন জানান, ‘সরকারিকরণের প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রথমে তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের ‘অ্যাডহক’ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রথম শ্রেণীর পদে নিয়োগে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগে। এর আগে জনপ্রশাসন, অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়োগ অনুমোদন করাতে হবে। এরপর সরকারি কর্মকমিশন শিক্ষকদের কাগজপত্র ও এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) যাচাই-বাছাই করে যোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগের সুপারিশ করবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে সরকারিকৃত কলেজের মধ্যে ৪০টি কলেজের আত্তীকরণ কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ১২টির শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি নিয়মিতকরণ অর্থাৎ সরকারিকরণের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কলেজগুলোর পদ সৃজন শেষ হয়েছে। এছাড়া ২৯০টি কলেজ সরকারিকরণের শুধুমাত্র সরকারি আদেশ জারি হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি প্রফেসর আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘চাকরি নিয়মিতকরণের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সবারই পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো উচিত। কারণ আমরা দেখলাম, একজন লোক দেশেই নেই, অথচ তার চাকরি নিয়মিতকরণ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাদের চাকরি নিয়মিতকরণ করা হচ্ছে তারা আদৌ শিক্ষক কিনা, তাদের সনদ ঠিক আছে কিনা, তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে কিনা এবং তাদের অন্যান্য কার্যক্রমও খতিয়ে দেখা উচিত।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারিকরণ হওয়া ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইল কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। যিনি এক সময় উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই শিক্ষক একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হন।

এ ব্যাপারে স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের সদস্য সচিব সৈয়দ জাফর আলী বলেন, ‘সরকারিকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো প্রয়োজন। কারণ এসব কলেজ শিক্ষকের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী থাকতে পারে, নাশকতা মামলার আসামিও থাকতে পারে। এজন্য চাকরি নিয়মিতকরণের আগে তাদের সবকিছু ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।’

২০১৪ সালের ১৯ মে একটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিতকরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা, ২০০০’-এর বিধি ৬ এ বর্ণিত বিধান মোতাবেক তাদের শারীরিক সুস্থতা ও প্রাক-চরিত্র সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সন্তোষজনক রিপোর্ট এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের চাকরি (এডহক) নিয়মিত করা হবে।’

 

সৌজন্যে: দৈনিক সংবাদ

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068240165710449