সরকারিকরণের দাবিতে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ৪ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ খোকন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর ৬৪ জেলায় মানববন্ধন, ১৫ সেপ্টেম্বর ৮ বিভাগে মানববন্ধন, ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকরা অবস্থান নেয়ায় চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এসময় শিক্ষকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করনে। সেখান থেকে ৫ শিক্ষককে আটক করে পুলিশ। আটককৃত শিক্ষকরা হলেন আনোয়ার, বদরুল আমিন, নিগার সুলতানা, লিলা রানী দাস, শেখ শিখা। আটককৃত শিক্ষকদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিকেল ৪টার দিকে আটক শিক্ষকদের ছেড়ে দেয়া হয়।
শিক্ষকদের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা, আটক ৫
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন, সিনিয়র সহ সভাপতি মিজানুর রহমান,ফিরোজ উদ্দিন,সহ সভাপতি শাহনাজ পারভিন, ধরনি মোহন রায়, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সুমন কুমার,সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক পরেশ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ জানুয়ারি সারাদেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়। তবে সে সময়ে বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা যথাযথভাবে পরিসংখ্যান করা হয়নি। ফলে সারাদেশের ৪ হাজার ১৫৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
সরকারিকরণের দাবিতে তৃতীয় ধাপেও বাদ পড়া এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথমে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। পরে ২৬ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিও শুরু করেছিলেন তারা। পরে তিনজন সচিবের আশ্বাসে ৭ ফেব্রুয়ারি অনশনের ১৮ দিন পর কর্মসূচি স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার বাদপড়া ৪ হাজার ১৫৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে।
গত ৮ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন করে আর কোনো বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হবে না বলে ইঙ্গিত দেন। মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এমন কোনো স্থান নেই যেখানে দুই কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তাই নতুন করে আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করার পরিকল্পনা নেই সরকারের।
তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াধীন ৩২টি প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকারিকরণ হবে। এগুলো প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২৬ হাজারের মধ্যে রয়েছে।
সরকারিকরণের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অনশন এবং তাদের হিসাব মতে বাদপড়া চার হাজার ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ‘আর কোনও বিদ্যালয় সরকারিকরণ হবে না।’