লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘পুলিশের লাঠিপেটা নয়, প্রাথমিক শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিন।’ বুধবার গ্রেড পরিবর্তন এবং বেতন বৃদ্ধির দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের বাধা দেয়া প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মূল ভরসা শিক্ষার ওপর। এই জনসংখ্যাকে শিক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই মানবসম্পদে রূপ দেয়া সম্ভব নয়। শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া সময়ের দাবি।’
শিক্ষার উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার দায় প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো, তাদের মর্যাদা বাড়ানোই ছিল শিক্ষার উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। এটি রাষ্ট্র বুঝতে পারেনি। শিক্ষকদের মর্যাদা না দিয়ে আপনি শিক্ষার মান বাড়াবেন কী করে? এ কারণেই আমি বলছি, পুলিশের লাঠিপেটা নয়, প্রাথমিক শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিন। প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষকদের খুব অবহেলা করা হয়েছে।’
শিক্ষকদের বৈষম্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কলেজ বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং ব্যবসা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও ক্লাস নেন। তুলনামূলকভাবে তাদের অবস্থা অনেক ভালো। কিন্তু বিপুলসংখ্যক শিক্ষক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, অথচ তাদের যথাযথ মূল্যায়ন নেই।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সমগ্র জনসমষ্টিকে শিক্ষিত করে তোলার পেছনে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবদানেই সবচেয়ে বেশি। আমরা বারবার বলে আসছি, প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করতে হবে। ধনীর সন্তানেরা বেসরকারি দামি স্কুলে পড়বে, আর গরিবের সন্তানদের জন্য সরকারি প্রাথমিক এই চিন্তা বাতিল করতে হবে।’
‘শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের কারণে সাধারণ ঘরের সন্তানরা কূল পাচ্ছে না। যারা টাকা আছে, সেই ভালো শিক্ষা ক্রয় করতে পারছে। রাষ্ট্রের উদাসীনতার কারণেই এমন হচ্ছে। রাষ্ট্র দায়িত্ব নিলে এই বৈষম্য থাকত না। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা পড়ছে, তাদের শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। এমন শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর একটি জাতি দাঁড়াতে পারে না। জাতি দাঁড়ালেও ভঙ্গুর মেরুদণ্ড দৃশ্যমান হয়’- যোগ করেন এই শিক্ষাবিদ।
বুধবার গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের পূর্বঘোষিত সমাবেশে বাধা দেয় পুলিশ। শিক্ষকরা শহীদ মিনারের সামনে থেকে সরে গিয়ে পাশেই অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ জন আহত হন বলে শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন।