পূজার ছুটিতে প্রাথমিকে বঞ্চনা - Dainikshiksha

পূজার ছুটিতে প্রাথমিকে বঞ্চনা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রাথমিক শিক্ষকেরা সরকারি কর্মচারী হলেও তাঁরা হলেন ভ্যাকেশনাল বিভাগের কর্মচারী। শিক্ষক ছাড়া বাকি সকলেই ননভ্যাকেশনাল বিভাগের কর্মচারী। শিক্ষকেরা অর্জিত ছুটি পায় অর্ধবেতনে ১টা, শ্রান্তি বিনোদনের ১৫ দিনের ছুটি পায়না, পিআরএল এ অর্ধবেতনে ১ বছর বেতন পান। অর্জিত ছুটি ১টা বিধায় চিকিৎসা, হজসহ নানা ছুটি বিনা বেতনে পেয়ে থাকে। লাম্পগ্যান্টের টাকাও অনেক কম পায়। সরকারি কর্মচারীরা ননভ্যাকেশনাল কর্মচারী গণ্য হওয়ায় অর্জিত ছুটি ২টা, শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি ১৫ দিন, পিআরএল এ পূর্নবেতন ১ বছর, অর্জিত ছুটি ২টা বিধায় চিকিৎসা, হজসহ নানা ছুটি পূর্নবেতনে পেয়ে থাকেন। 

প্রাথমিক শিক্ষকদের বাৎসরিক ছুটি ৭৫ দিন। সরকারি কর্মচারীদের বছরে ৫২ দিন শনিবারসহ সরকারি গেজেটে ২৪/২৫ দিন ছুটি থাকে। তাতে দেখা যায় তাদের ৫২+২৪=৭৬ ছুটি। সরকারি কর্মচারীরা ৭৫ দিনের চেয়ে বেশি ছুটি ভোগ করে থাকেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের ৭৫ দিনের ছুটির মধ্যে জাতীয় দিবসসহ নানা দিবসে কমপক্ষে ১০ দিন ছুটি ভোগ করতে পারে না। 

এ ছাড়াও বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধু ফুটবল প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ নানা কাজে ছুটি ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়। বর্তমানে শিক্ষা উপবৃত্তি কাজ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষকের খানিকটা বিশ্রামকে হারাম করে দিয়েছে। এবার ঈদের ছুটি ছিল বিস্ময়কর। শিশু শিক্ষার্থীদের ঈদের পর দিন স্কুলে আসার জন্য ছুটির তালিকা নির্দেশনা ছিল। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা ঈদের আনন্দ স্কুলে এসে উপভোগের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

আমাদের সমাজে কানে কম শুনে ও চোখে কম দেখে লোকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ফেসবুকসহ সংবাদপত্রে লেখালেখির পরও ছুটি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে নজর কাড়তে পারেনি। প্রাথমিকের সংশ্লিষ্টরা কানে কম শুনা বা চোখে দেখেও না দেখার ভান করে বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টির পাশাপাশি ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে চলেছেন। বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। 

জাতীয় দিবস ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে বিদ্যালয় খোলা রেখে শিক্ষার্থীকে দিবসের গুরুত্ব বিশদ আলোচনার মাধ্যমে দেশের ইতিহাস সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া প্রয়োজন। বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে দায়সারা দিবস পালন করা নিছক প্রতারণার শামিল। শিক্ষক শিক্ষার্থীর অধিকার ক্ষুণœ করে চলে আসছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। ইদানিং মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর মিড. ডে মিলের প্রশংসনীয় সফল উদ্যোগে, শিক্ষার্থীরা পেটের ক্ষুধা নিবৃত্ত করে  পড়াশুনায় মনোযোগী করে তুলেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও উৎসবে একাকার হয়ে পড়েছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি।

মহান বিজয় দিবসে গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্য বিজয় ফুল তৈরি উদ্যোগ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিজয় ফুল তৈরি ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অন্যান্য প্রতিযোগিতা আয়োজনের মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু প্রতিযোগিতাটি শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানভিত্তিক হওয়ায় এ সময় পূজার ছুটি থাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা অনেকেই এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ বিদ্যালয় পর্যায়ে নির্ধারিত ১৭ অক্টোবর বড় পূজা বলে কথিত মহাঅষ্টমী পূজা। 

২০ অক্টোবর উপজেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতাও ছুটির মধ্যে বিজয়া দশমীর পরদিন। হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষকরাও পূজার ছুটি সানন্দে উপভোগ করতে পারবে না। ফলে এ নিয়ে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাই নয় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ক্ষোভ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বলীয়ান সরকারের আমলে মোটেই কাম্য নয়। 

শিক্ষার্থী শিক্ষকের ছুটির মাঝে স্কুল খোলা রাখাসহ নানা কাজে ব্যস্ত রাখা থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানাই।  মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে বিজয় ফুল তৈরি প্রতিযোগিতা পূজার ছুটির পর তারিখ পুনঃনির্ধারণের জন্য ও জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের অধিকার সমুন্নত রাখার প্রত্যাশা রইল। 

লেখক : আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।

 

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080068111419678