পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় - দৈনিকশিক্ষা

পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দাবি অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। রাজধানীর অনতিদূরে পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে অবশেষে ঢাবির নামে বরাদ্দ হয়েছে ৫২ একর জমি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এই জমির বরাদ্দপত্র ইতোমধ্যেই হস্তান্তর করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষের হাতে। অর্থ সমন্বয়ের জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য বলতেই হয় যে, এই জমির পরিমাণ খুব বেশি নয়- সব রকম সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সর্বাঙ্গ সুন্দর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। তবে আধুনিক বহুতলবিশিষ্ট স্থাপত্য কাঠামো সংবলিত পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব হলে স্থান সঙ্কুলান নিশ্চিত হতে পারে বৈকি। প্রস্তাবিত ঢাবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে সর্বাধুনিক আবাসিক সুবিধাসহ ক্যাম্পাসটি পরিচালিত হবে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি, সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। এখানে স্থানান্তরিত হতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি ও বিভাগের কার্যক্রমও।

প্রসঙ্গত মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যে, ১৯২১ সালে ৬৪০ একর জমি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে দখলে আছে মাত্র ৩০০ একর জমি। ইতোমধ্যে ঢাবির শিক্ষা পরিধি অনেক বেড়েছে। নতুন নতুন ফ্যাকাল্টি ও বিভাগ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে সময় ও চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে। বেড়েছে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকম-লী ও স্টাফের সংখ্যাও। ফলে দিবারাত্রি দুই শিফট চালিয়েও কিছুতেই আর স্থান সঙ্কুলান করা যাচ্ছে না। সত্যি বলতে কি, ঢাবি বর্তমানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকম-লীর ভারে ভারাক্রান্ত। আবাসন সঙ্কট প্রকট। ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার প্রচ- অভাব। হোস্টেল ও আবাসিক ভবনগুলোর অবস্থা শোচনীয়। প্রসঙ্গত জগন্নাথ হলের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। তদুপরি শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা এবং তার সমাধানে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-ধর্মঘট-ভাংচুরে উত্তাল ক্যাম্পাস ও বেসামাল কর্তৃপক্ষ সেখানে কিছু হলেই এর অনিবার্য প্রভাব গিয়ে পড়ে শাহবাগে, যাতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়, রুদ্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস এর সমাধানে সহায়ক হতে পারে বৈকি।

ঢাবি প্রশাসন যে কতটা অসহায় তার প্রমাণ মিলেছে কিছুদিন আগে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে তড়িঘড়ি করে ৭টি সরকারী কলেজ অধিভুক্ত করা ভুল হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশী নির্যাতনে সাধারণ শিক্ষার্থীর টিয়ার গ্যাস শেলের আসাতে অন্ধত্ববরণসহ ঢাবি শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রহৃত হওয়ার অভিযোগও আছে। মামলাসহ নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ, প্রশাসন পরিচালনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে দেখাশোনার জন্য স্বতন্ত্র জনবল ও ব্যবস্থাপনা যে অপরিহার্য তা ঢাবি কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এ রকম পরিবেশ-পরিস্থিতি কোন অবস্থাতেই প্রত্যাশিত নয়।

একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্বের খ্যাতনামা হাজারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বুয়েট, ঢামেকের তো প্রশ্নই ওঠে না। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণাকে ঘিরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঘটছে। কেন এমনটি হচ্ছে তা দেখারও কেউ নেই। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সরকারী অনুদানের পরিমাণও নগণ্য। শিক্ষা খাতে বার্ষিক সরকারী বরাদ্দের অধিকাংশই চলে যায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অবকাঠামো উন্নয়নে। শিক্ষাক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষকের সংখ্যাও খুব কম। প্রকৃত মেধাবীরা বৃত্তি নিয়ে চলে যায় বাইরে। উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে থাকে বিদেশে। সুতরাং দেশের অবনতিশীল শিক্ষা এবং তার মান নিয়ে কেউই মাথা ঘামাচ্ছেন না- না সরকার, না সংশ্লিষ্টরা। এই অমানিশার অবসান কবে ঘটবে কে জানে! নতুন ঢাবি ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রে যেন এমনটি না ঘটে সেটাই প্রত্যাশা।

 

সৌজন্যে: জনকণ্ঠ

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069031715393066