পোশাকের বাধ্যবাধকতা নিয়ে আহমদ শফী'র মন্তব্যে নারীদের আপত্তি থাকলেও সমর্থন আছে অনেকের - দৈনিকশিক্ষা

পোশাকের বাধ্যবাধকতা নিয়ে আহমদ শফী'র মন্তব্যে নারীদের আপত্তি থাকলেও সমর্থন আছে অনেকের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমেদ শফী তার সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে মেয়েদের শিক্ষা প্রসঙ্গে এক মন্তব্য করে যেমন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমর্থনও পাচ্ছেন অনেকের।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে শুক্রবার এক মাহফিলে মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে না দিতে এবং দিলেও সর্বোচ্চ ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়ানোর জন্য উপস্থিত মানুষের কাছে 'ওয়াদা' চান মি. শফী। তার এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন তার এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তবে তার মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থিত করা হয়েছে বলে পরে গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দেন মি. শফী।

বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তার বক্তব্যে মেয়েদের শিক্ষার বিরোধিতা নয়, ইসলামের মৌলিক বিধান মেনে চলার ব্যাপারে তাদের সতর্ক হতে তাগিদ দিয়েছেন তিনি। ইসলাম ধর্মে নির্দেশিত নীতিমালা অনুসারে নারীদের পর্দার বিধানের পক্ষে এবং সহশিক্ষার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন বলে বিবৃতিতে বলেছেন মি. শফী।

"কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়াতে চাইলে বোরকা পরতে হবে এবং তাদের শিক্ষকও হতে হবে নারী," তিনি বলেন। মি. শফী এই মন্তব্য করার পর এর নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয় সামাজিক মাধ্যমে।

প্রগতিশীল চিন্তাধারার অধিকাংশ মানুষ এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন এবং নিন্দা জানান। বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গণে নারীদের অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি যখন কওমী মাদ্রাসাগুলোতেও মেয়েদের পড়ার হার বাড়ছে, তখন কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনের শীর্ষ নেতার এমন মন্তব্য নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকে।

কিন্তু, এ বিষয়ে ফেসবুকে মতামত জানতে চাওয়া হলে অধিকাংশ নারীর কাছ থেকেই পাওয়া যায় অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া।


ফেসবুকে নারীদের কী প্রতিক্রিয়া?

উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে বোরকা পড়তে হবে - আহমেদ শফী'র এই মন্তব্য সম্পর্কে বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় মতামত জানতে চাওয়া হলে মন্তব্যের সমর্থন করে কমেন্ট পোস্ট করেন অধিকাংশ নারী।

আহমদ শফী'র মন্তব্যকে সমর্থন করা অধিকাংশ নারীই সমর্থনের কারণ হিসেবে ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরানে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী পোশাক পরার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

রাবেয়া সুলতানা নামে একজন লিখেছেন, "এটা শফী আহমদের কথা না, এটা কোরানের কথা, আপনি যদি কোরানকে ভালবাসেন ও আল্লাহকে ভয় করেন তাহলে ওনার কথা ঠিক আছে, এটা মানা না মানা আপনার ব্যাপার।"

পোস্টে মি. শফী'র মন্তব্যকে সমর্থন করা অধিকাংশ নারী একই ধরণের কারণ দেখিয়েছেন। আবার অনেক নারী মি. শফীর মন্তব্যকে সমর্থন করলেও বোরকা পরা বা না পরার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে একজন নারীর ব্যক্তিগত পছন্দকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

ফারহা মন্তব্য করেছেন, "খারাপ বলেন নি সত্যি বলতে গেলে। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয়ার অধিকার নেই ইসলাম ধর্মে কারো, আমাদের নবীও তা করেন নি।"

বোরকা পরা বা পর্দা করার ক্ষেত্রে নারীর নিজের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়েছেন অনেক নারীই। এদের প্রায় সবাই পর্দা করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তাহমিনা পাভিন নিপু লিখেছেন, "মেয়েদেরকে পর্দার ভিতরে থাকতে হবে এটাই বড় কথা। তবে জোর করে কারো উপরে কিছু চাপিয়ে না দিয়ে আগে এদেরকে বুঝতে হবে যে পর্দাটা আসলে কি, পর্দা কেন করবো। আর এরা যখন এটার গুরুত্বটা বুঝতে পারতে তখন তারা নিজে থেকেই পর্দা করবে।"

কমেন্ট করে আহমদ শফী'র মন্তব্যের ঘোর বিরোধিতাও করেছেন কয়েকজন নারী, তবে তুলনামূলকভাবে তাদের সংখ্যাটা ছিল নগণ্যই।

মৌমিতা আলো লিখেছেন, "যে দেশের পুরুষের নিজস্ব কিছু নেই, এরা নিয়ন্ত্রিত হয় নারীর পোশাক দ্বারা। কে কি পরবে আর কি পরবে না সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।"

তবে ধর্মীয় নীতিমালার বিষয়টিকে গৌণ হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় বোরকা পরা বা পর্দা করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন অনেকে।

জাহান সোনিয়া নামে একজন মন্তব্য করেন, "এখনকার সময় কিছু কিছু মেয়েরা এমন সব জামা পড়ে দেখতে লজ্জা করে। তাই বোরখা পরলে অন্তত ইভটিজিং'র শিকার হবে না।"

পোস্টে পুরুষ মন্তব্যকারীদের সিংহভাগও মি. শফী'র দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থন করেই মন্তব্য করেন। নারীরা বোরকা পরলে বা পর্দা করলে ধর্ষণের ঘটনার হার কমে যাবে বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

সৌজন্যে: বিবিসি বাংলা

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073130130767822