প্রকাশনাকে শিল্প বলা হলেও এই শিল্পকে এখনো সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। পাঠ্যপুস্তক ও সৃজনশীল বই প্রকাশের মাধ্যমে প্রকাশকরা দেশে বুদ্ধিজীবী তৈরি করছে। এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে দ্রুত শিল্প খাতের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা। বুধবার (২০ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ পাঠ্য পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি আয়োজিত ‘শিক্ষিত জাতি গঠনে প্রকাশনা শিল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এ দাবি জানান।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর ড. রতন সিদ্দিকী, পশ্চিমবঙ্গের ‘পাবলিশার্স এন্ড বুকসেলার্স গিল্ড’ এর সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ সভাপতি কামরুল হাসান শায়ক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরিচালক আবুল বাশার ফিরোজ।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে কামরুল হাসান শায়ক বলেন, দুই রকমের বই প্রকাশ ও বিক্রি করে থাকি আমরা। দুই রকমের বইয়ের মধ্যে একটি ফিকশন যেগুলো গল্প কবিতার বই। অন্যটি হচ্ছে ননফিকশন যেগুলো অ্যাকাডেমিক এবং ধর্মীয় বই। গল্প কবিতার বই মাত্র ৩ শতাংশ। আর অ্যাকাডেমিক এবং ধর্মীয় বইয়ের চাহিদা ৯৭ শতাংশ। ৩ শতাংশ গল্প কবিতার বই দিয়ে প্রকাশ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ৯৭ শতাংশ টিকিয়ে রাখতে না পারলে প্রকাশনা শিল্পে কবর তৈরি হবে বলে মনে করেন কামরুল হাসান শায়ক। অনুশীলন বইকে নোট গাইড বলে বন্ধ করে দেয়ার হলে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা তৈরি বাধাপ্রাপ্ত হবে বলেও তিনি মনে করেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, প্রকাশ ও মুদ্রণ শিল্পের সমস্যা সমাধানে সরকার সচেষ্ট আছে। এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রত্যেকের জীবন মান উন্নয়নে সরকার পাশে থাকবে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বই মেলার আয়োজন করা হবে। এছাড়া আগামী বছর মুজিববর্ষ পালন করবে সরকার। এজন্য প্রতিমন্ত্রী প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সহযোগিতা কামনা করেন। মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি দপ্তর খোলা হবেও জানান তিনি।
প্রফেসর ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, জাতি গঠনে প্রকাশনা শিল্প অনেক বড় অবদান রাখছে। প্রকাশকরা এদেশে বুদ্ধিজীবী তৈরি করছে। পাঠ্যপুস্তক ও সৃজনশীল বইয়ের বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, শিক্ষক জাতি গঠনে প্রকাশনা শিল্পের ভূমিকা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
মূল প্রবন্ধে আবুল বাশার ফিরোজ বলেন, অনেকেই প্রকাশনাকে ‘প্রকাশনা শিল্প’ বলি। কিন্তু প্রকৃত সত্য সরকার এখনো এই খাতকে শিল্প ঘোষণা করেনি। অনেক কিছুই শিল্প হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার মেরুদণ্ড প্রকাশনা আজও ‘শিল্প’ মর্যাদা পায়নি। ফলে আমরা পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভাষার জাতি গোষ্ঠী দেশের নাগরিক হয়েও রবীন্দ্রনাথের পর বিশ্বসাহিত্যে কেউ পরিচিত হতে পারিনি। প্রকাশনাকে ‘শিল্প’ মর্যাদা দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।