উচ্চতা মাত্র দুই ফুট সাত ইঞ্চি। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েই অদম্য মেধাবী আতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের এই যুবক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে প্রথম বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে গত বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে পরীক্ষা দেন।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উপজেলায় মেধাতালিকায় ২৭তম হন তিনি। তার চাওয়া ছিল বাড়ির কাছাকাছি কোনো স্কুলে যেন তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা তার সেই আবদার রাখলেন না। তাকে নিয়োগ দেয়া হলো বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বালিপাড়ায়।
ত্রিশাল উপজেলার কাটাখালী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক আবদুল খালেকের ১০ ছেলেমেয়ের মধ্যে আতিকই শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেন। তার যমজ ভাইটি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠলেও আতিক দুই ফুট সাত ইঞ্চির বেশি উচ্চতায় বাড়েনি। বেঁটে বলে ছোটবেলায় তাকে অনেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও উপহাস করত।
কিন্তু শারীরিক এ প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। অদম্য আতিক প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে কাটাখালী উমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন। প্রতিবন্ধী কোটায় নয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান মেধাতালিকায় ৩৬তম হয়ে। ২০১৮ এ এখান থেকে স্নাতকোত্তর।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রাথমিকের শিক্ষক পদে পরীক্ষার ফল বের হয়। ত্রিশাল উপজেলায় মেধাতালিকায় তিনি হন ২৭তম। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আতিক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগ দেন। নিজের শারীরিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে বাড়ির কাছাকাছি পছন্দের দুটি বিদ্যালয়ের একটিতে যোগ দেয়ার জন্য আবেদন করেন।
কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ তার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হয় বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বালিপাড়া ইউনিয়নের বালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আতিক বেশ কয়েকবার গেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তাতে কোনো লাভ হয়নি।
গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কথা হয় আতিকের সঙ্গে। বাবা-মাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। আতিক বলেন, ‘আমি ঠিকমতো গাড়িতেই উঠতে পারি না। প্রতিদিন ৩০ কিলোমিটার দূরের পথ আসা-যাওয়া করে স্কুলের ক্লাস নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ৩-৪ বার গিয়েছি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি’।
কাটাখালী গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, আতিকের মতো একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর সঙ্গে প্রশাসনের এটা অমানবিক আচরণ।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, আতিকের জন্য খুব কষ্ট হবে এতদূর গিয়ে চাকরি করা। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। বাড়ির কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয়ের পদ শূন্য হলে সেখানে তাকে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল হক বলেন, বিষয়টি তারা ভেবে দেখছেন।