প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীরের লেখাপড়া অর্থাভাবে বন্ধের পথে - দৈনিকশিক্ষা

প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীরের লেখাপড়া অর্থাভাবে বন্ধের পথে

মশিউর রহমান, গাইবান্ধা |

যারা উদ্যমী ও পরিশ্রমী কোনো বাধাই তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। তারই এক  দৃষ্টান্ত  প্রতিবন্ধী কলেজ শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর  আলম। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের সেবা করতে চায় সে। কিন্তু তার এই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্র্যতা। আদৌ কি তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে? সে তার  পড়ালেখা শেষ করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে? এমন চিন্তায় দিন কাটছে তার। 

জাহাঙ্গীর আলমের জন্ম গাইবান্ধা সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে এক হতদরিদ্র বাতাস আলীর পরিবারে। জাহাঙ্গীরের পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম দ্বিতীয়। মোলংবাজার দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে জিপিএ-৪.৯০ পায় সে। এসএসসিতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জিপিএ-৪.৫৬ পেয়ে সে এইচএসসি ১ম বর্ষে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয় গাইবান্ধা সরকারি কলেজে। কিন্তু অর্থের অভাবে গত মাসে টিসি নিয়ে (১৭ ফেব্রুয়ারি) ধাপের হাট শাহ আজগর আলী ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির সুবিধা সে কখনো পায়নি। হেঁটে ২০০ গজ কোথাও যাওয়া তার জন্য অনেক কষ্টের। সহপাঠী শাহিন, জয়, মশিউর জাহাঙ্গীরকে বাইসাইকেলে নিয়ে যায় কলেজে, ক্লাস শেষে আবার বাড়িতে রেখে যায়। প্রতিদিন টাকা দিয়ে যানবাহনে যাওয়ার খরচ চালাতে পারেন না তার পিতা। অর্থাভাবে পড়াশুনা চালাতে পারবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কিত জাহাঙ্গীর আলমের পরিবার। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন কি জাহাঙ্গীরে পূরণ হবে না? সে আর ১০ জন মানুষের মতো সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না? জাহাঙ্গীরের এই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার জন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। মেধাবী এই কলেজ শিক্ষার্থীর পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ স্থানীয় সবার মুখে মুখে। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী অদম্য মেধাবী জাহাঙ্গীর আলম। সহপাঠীদের সাহায্য নিয়ে তার যেতে হয় কলেজে। কিন্তু শিশুকাল থেকেই শিক্ষাজীবনে কখনও হার মানেনি সে। মা-বাবার প্রেরণায় ও অক্লান্ত সহযোগিতায় শত বাধা আর বিপত্তিকে পেছনে ফেলে সে এখন শাহ আজগর আলী ডিগ্রি কলেজের একজন শিক্ষার্থী। এ পর্যন্ত তার ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতাও। ভ্যানচালক বাবার ঘাম ঝরানো টাকা দিয়ে সংসার পরিচালনা করা আর ছেলের পড়ালেখা চালানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে জাহাঙ্গীর আলম ও তার পরিবার। জন্ম থেকেই আর্থিক অনটন আজও পিছু ছাড়েনি। তবুও জাহাঙ্গীর সামনে এগিয়ে যেতে চায়।

সহপাঠী শাহিন বলেন, জাহাঙ্গীর অত্যন্ত মেধাবী ও সরল মনের অধিকারী। তার চোখের দিকে তাকালে সহজেই ভেসে ওঠে কষ্টের ছাপ। তবুও সে ভেঙে পড়ে না। ধৈর্য্য ধরে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীর আলমের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেয়ার জন্য গেলেও তা আজও হয়নি। আমরা গরিব। আমাদের কথার কেউ গুরুত্ব দেয় না বলে চোখের পানি মুছতে থাকেন জাহাঙ্গীর আলমের মা। তিনি বলেন, এলাকার অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ছেলের পড়ালেখার জন্য, তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করেছি। এতদিন অনেক কষ্ট করে ছেলেকে চালিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এখন আর পারছি না।  প্রতিবন্ধী ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য সবার সহযোগিতা চান জাহাঙ্গীর আলমের মা।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলার ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর আজম মণ্ডলের সাথে কথা বললে তিনি দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, এর আগে প্রতিবন্ধী ভাতা দিতে পারিনি। এবার পাবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। 

এদিকে ধাপের হাট শাহ আজগর আলী ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মো. আলেক উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম কলেজে নিয়মিত ক্লাস করে। পড়াশুনায় যথেষ্ট আগ্রহী সে। কলেজের অভ্যন্তরীণ ফি মওকুফ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক শিক্ষাকে জানান, পরিবারে রয়েছে আরো দুইজন ভাই। ভ্যানচালক বাবা তাদের চালাবে না আমাকে পড়ালেখার খরচ দিবে? মা আর কত দিন আমার জন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করবেন? আমি সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি; আমাকে হাত ধরে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056149959564209