দেশজোড়া লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের প্রথম আটটি শ্রেণিতে উন্নীত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পথেই হাঁটছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক বুধবারেই সিবিএসই-কে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ছাত্রছাত্রীকে পরের ক্লাসে তুলে দিতে হবে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন, এই শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কাউকেই ফেল করানো যাবে না। কিন্তু রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শিক্ষা শিবিরের বৃহৎ অংশ। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘শিক্ষা দপ্তর ঠিক করেছে, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির সব পড়ুয়াই পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হবে। কোনও ‘ডিটেনশন’ (কাউকে আটকানো) হবে না।’’ আগে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস-ফেল ছিল না। চলতি শিক্ষাবর্ষে কেন্দ্র শিক্ষার অধিকার আইন বদল করায় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালু হয়েছে। করোনার রক্তচক্ষুতে এ বারেই অন্তত চলতি বছরের জন্য পাস-ফেল প্রথা বহাল রাখতে হচ্ছে।
তবে এ বছর প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির সব ছাত্রছাত্রীকে পাস করিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে শিক্ষা শিবিরের অধিকাংশ। তাদের মতে, নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার কথা। শিক্ষা দপ্তর সকলকে পাস করানোর সিদ্ধান্ত এক তাড়াতাড়ি না-নিলেই পারত। এর ফলে অনেক ছাত্রছাত্রীরই লেখাপড়ায় কোনও আগ্রহ থাকবে না। করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে এগোচ্ছে, তা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল।
সিবিএসই-র ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, এ বার নবম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এ-পর্যন্ত নেয়া পিরিয়ডিক টেস্ট, টার্ম টেস্ট, প্রজেক্ট-সহ স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে উন্নীত করা হবে। রাজ্যে কী হবে?
প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির সব পড়ুয়াকে পরের ক্লাসে তুলে দেয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য অনলাইনে পড়াশোনার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। ‘‘নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা অব্যাহত রাখতেই প্রযুক্তির মাধ্যমে পঠনপাঠনের ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে,’’ বলেন পার্থবাবু। তিনি জানান, ওয়েবসাইট, ই-মেল ও দূরদর্শনের মাধ্যমে কীভাবে পঠনপাঠন চালু করা যায়, সেই বিষয়ে স্কুলশিক্ষা দপ্তর ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমতি দিলে তা শুরু করা হবে।
স্কুলশিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলার শিক্ষা পোর্টালে প্রতিটি স্কুলে পড়ুয়াদের যোগাযোগের তথ্য আছে। কী পড়ানো হবে, তা প্রধান শিক্ষককে জানালে শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের ফোন করে সেগুলো জানিয়ে দেবেন। দূরদর্শনের মাধ্যমে কী ভাবে পড়াশোনা হবে, তারও একটা রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষা দপ্তরের আশা, এই পাঠ-পদ্ধতি খুব দ্রুত বলবৎ করা যাবে।