বছরের শুরুতে বরিশাল নগরীর বিদ্যালয়গুলোতে নতুন ক্লাসে উঠতে সর্বনিম্ন দু’হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ হাজার পর্যন্ত নেয়া টাকা লোপাট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নগরীর কালিবাড়ী রোডের জগদীশ স্বারস্বত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত কমিটি শনিবার প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা লোপাটসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে একাধিক আবেদন করে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ। এসব আবেদনের প্রেক্ষিতে একাধিক তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছে জগদীশ স্বারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম।
এসব অভিযোগ ও সরেজমিন অনুসন্ধানকালে জানা যায়, ১২শ’ শিক্ষার্থী সমৃদ্ধ স্বারস্বত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিরোধ চলাকালীন ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ অক্টোবর যোগদান করেন প্রধান শিক্ষক শাহ আলম। এরপর উন্নয়নের নামে যোগদানের সময় থেকে মাত্র ৭ মাসের ব্যবধানে তিনি ভুয়া ভাউচার দিয়ে বিদ্যালয়টির ব্যাংক হিসাব থেকে সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশে ৬০ লাখ টাকা উঠিয়ে নেন। এ টাকা দিয়ে ২টি কক্ষ টাইলস, রং করা, ফলস সিলিং, দুটি কেসি গেইট, দশটি কাঠের চেয়ার ক্রয়সহ বিভিন্ন ধরনের ভাউচার দেখান তিনি। ম্যানেজিং কমিটির নিয়মানুযায়ী সকল আয় দিন শেষে ব্যাংক হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। এরপর ব্যয়ের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তের পর প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন হবে। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি টাকা উত্তোলন করে তাদের সুবিধামতো ব্যয় ভাউচার তৈরি করেন বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাত্ করতে তার নেয়া পদক্ষেপের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ব ধার্যকৃত টিফিন খরচ এক লাফে তিনি ১৪০ টাকা বৃদ্ধি করে ২শ’ টাকা করেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে টিফিন বাবদ ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় করে ব্যয় করেন ১ লাখ ২০ হাজার। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে অদ্যাবধি কোনো টিফিন দেয়া হয়নি। অথচ চলতি বছরে টিফিনের বিপরীতে ১২শ’ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিন মাসে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বছরের ৬ থেকে ৭ মাস পাঠদান কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। বাকি মাসগুলো পরীক্ষা ও বিভিন্ন দিবস পালন উপলক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকে। অথচ টিফিন খরচ নেয়া হয় ১২ মাস। গত বছরের শেষের দিকে এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেয়ায় পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক এডহক কমিটির সভাপতি হন। সেই থেকে প্রধান শিক্ষক নিজ নামের একাউন্টে বিদ্যালয়ের টাকা জমা এবং তা থেকে ইচ্ছেমাফিক খরচ করছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন, মাধ্যমিক দপ্তর থেকে ইতোমধ্যে তদন্ত টিম প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বলেন, তদন্ত টিম এসেছে আমি বিব্রত। এ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে পরে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. অজিয়র রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এডিসি রাজস্ব ও একজন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাসহ একটি তদন্ত টিম গঠিত হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে সকল বিষয় স্পষ্ট হবে এবং প্রকৃত দোষী কে উদঘাটিত হবে।
বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস বলেন, বিদ্যালয়টিতে কলেজ চালু থাকলেও তাতে শিক্ষার্থী খুবই নগণ্য। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ রয়েছে। বর্তমানে জেলা প্রশাসক বিষয়গুলো দেখছেন, তাই তিনিই সমাধান করবেন।