রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাজিরউদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গত ২৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ নাজিরউদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আল মামুন তালুকদারকে গত ৮ এপ্রিল সাময়িক বহিস্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাবেক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে নিপীড়নের অভিযোগ ছিল। তাকে বহিষ্কার করায় নাজিরউদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে কে দায়িত্ব পাবেন কিংবা নতুন কাউকে এখানে পদায়ন করা হবে কি-না তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। এই বিদ্যালয়ে প্রায় এক যুগ ধরে কর্মরত আছেন জহুরুল ইসলাম।
এর মধ্যে সিনিয়রদের ডিঙিয়ে বিশেষ কৌশলে প্রায় ১০ বছর তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিদ্যালয়ের সরকারি ও বেসরকারি তহবিলের লাখ লাখ টাকা বিধিবহির্ভূতভাবে উত্তোলন ও ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। বিজ্ঞানাগারের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন বলে অন্য শিক্ষকরা জানান। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থের কোনো হদিস নেই। এর বাইরে বিদ্যালয়ের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিবছর উন্নয়ন ও বিবিধ খাতে জনপ্রতি প্রায় ৪৫০ টাকা করে আদায় করলেও সে টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের কোনো কাজ করেননি।
উপরন্তু বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে তার রূঢ় আচরণে সবাই অতিষ্ঠ। বিদ্যালয়ের বর্তমানে কর্মরত সাতজন শিক্ষকের মধ্যে মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে অন্য শিক্ষকরা দাবি জানিয়েছেন। তিনি ২০০১ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দশম গ্রেডের বেতনে চাকরিতে যোগদান করেন। অন্যদিকে জহুরুল ইসলাম কৃষি ডিপ্লোমা করে ১৯৯৫ সালে ১৪তম গ্রেডে চাকরিতে যোগদান করেন। বিএজিএড কোর্স সম্পন্ন করে তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন ২০০৪ সালে। সিনিয়র এ দু'জনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে কে দায়িত্ব পেতে পারেন তা নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক আলোচনা। এ অবস্থায় জহুরুল বাদে অন্য ছয়জন ও অপর এক এসিটি শিক্ষকসহ সাতজন যৌথ স্বাক্ষর করে জহুরুলের বিরুদ্ধে গত বুধবার ডাকে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জহুরুল ইসলাম জানান, ডিসির কাছে অভিযোগ দিয়ে কী হবে। তিনি তো আমাদের ডিপার্টমেন্ট বস নন। অভিযোগ থাকলে সরাসরি ডিজি মহোদয়ের কাছে করা উচিত। তিনিই বিদ্যালয়ের যে কোনো ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি কোনো অনিয়ম করেননি, যা করেছেন সব শিক্ষককে সঙ্গে নিয়েই করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত শিবলু জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তিন দিন আগে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হবে।