প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

সাখাওয়াত হোসেন সাখা, রৌমারি (কুড়িগ্রাম) |

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের নানা অনিয়মে ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, বিদ্যালয়ের মাঠে গরু-ছাগলের হাট, জায়গা বেদখল, সরকারি প্রকল্পের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের শতবর্ষী গাছ কর্তন, নতুন ও পুরনো বই বিক্রি, স্কুলের নামে বরাদ্দ ৬২ টি দোকানের হিসাবে গরমিল, শিক্ষক নিয়োগ ও বিদ্যালয় অ্যাকাউন্টের স্বচ্ছতা না থাকাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এব্যাপারে অভিভাবক ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। গত বছরের ১১ নভেম্বর লিখিতে এ অভিযোগে দ্রুত স্কুলের সকল অনিয়ম দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে। 

স্কুলের জমিতে গরুর হাটের একাংশ চিত্র

জানা যায়, ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে দুবার জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মান অর্জন করেছিল। তবে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের নানা অনিয়মে এসব সুনাম ক্ষুন্ন হতে চলেছে। অভিযোগ সূত্রে  জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যালয়ের মাঠে বসে গরু-ছাগলের হাট। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যহত হচ্ছে। হাটের ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা আদায় করার অভিযোগও রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। হাট বসায় প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগসাজোসে বিদ্যালয়ের মাঠের ১৯ শতাংশ জায়গা বেদখল করেছে স্থানীয় তিন ব্যাক্তি। বিদ্যালয়টিতে বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হয়। কিন্তু এ টাকা খরচে ভুয়া ভাউচারে বিল দেখানোসহ নানা অভিযোগ প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করেন স্কুলের নামে করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। অভিযোগে আরো জানা যায়, স্কুলের শত বছরের গাছ অবৈধ ভাবে কাটেন ও নতুন বই অন্যত্র বিক্রি করেন তিনি। অকারণে বিদ্যালয়ের পুকুর ভরাট করার ফলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য মাঠ সংকুচিত হয়ে গেছে। স্কুলের নামে প্রকল্প দেখিয়ে এমপি এবং জেলা পরিষদের বরাদ্দের টাকার আত্মসাৎ করা হচ্ছে।  

স্কুলের জমিতে অবৈধ দখলকৃত দোকান

সর্বশেষ ২০১০-২০১৪ খ্রিস্টাব্দে নিরীক্ষণ কমিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির আয় দেখা যায় ১ কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৯২ টাকা। কিন্তু ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৩ টাকা। আয় হওয়া টাকার আরো ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১৯ টাকা উদ্বৃত্ত হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে প্রতিষ্ঠানের টাকা থেকে আজও নিয়ম বহির্ভূতভাবে আয় ও ব্যয়ের হিসেব দেখিয়ে আসছে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে এনটিআরসিএ কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, অবৈধভাবে সাহিত্য রঞ্জন সরকার ও শফিকুল ইসলাম নামের ২ ব্যাক্তির কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা নিয়ে তাদের শিক্ষক পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উপৎল কান্তি সরকার।  বর্তমান প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। তার নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে তদবির আর সুপারিশ। 

স্কুলের আওতাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

অভিযোগকারীদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ এবং অনিয়ম বিষয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে সকল ঘটনা প্রকাশ পাবে।  স্কুলে অধিকহারে বেতন, অযৌক্তিক সেশন ফি ও মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরমপূরণে অতিরিক্ত অর্থ ফি ধার্য করা হয়। শিক্ষক নিয়োগে প্রধান শিক্ষক বড় অঙ্কের অর্থ নেন, কিন্তু তা ব্যাংকে জমা করেন না। নিকট আত্মীয়দের টাকার বিনিময়ে কৌশলে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাকে জানান, আমি একজন ভালো লোক। আমার মধ্যে কোন ভুকিচুকি (কোন অনিয়ম) নেই। আমি কোন অনিয়ম করি না। যারা বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারেনি, তারা অভিযোগ করতেই পারে।

বিদ্যালয়ের মাঠে গরু ছাগলের হাটের বিষয় জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রব দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, চেষ্টা করছি গরুর হাট উচ্ছেদ করে দেয়ার। কিন্তু স্থানীয় চাপের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনও জানে। 

এ প্রসঙ্গে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাদের দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমি এই উপজেলায় ইউএনও হিসেবে নতুন এসেছি তাই বিষয়টির ব্যাপারে কিছুই জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ খবর নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়টির অনিয়ম প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই স্কুলের নামে আমার কাছে কোন ধরনের অভিযোগ নেই।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0081338882446289