জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সানন্দবাড়ী বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়তে গেলে ছাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তিনি। গত সোমবার নির্যাতিত এক ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের এ কুকীর্তি ফাঁস করলে এলাকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নির্যাতিত ছাত্রীরা এত দিন মুখ খোলার সাহস পায়নি। গত শুক্রবার সানন্দবাড়ী বাজার এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, গত সোমবার স্কুল ছুটি শেষে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পড়া দেখিয়ে দেবেন বলে স্কুলে অপেক্ষা করতে বলেন প্রধান শিক্ষক। সবাই চলে যাওয়ার পর মেয়েটির ওপর যৌন হয়রানি করেন প্রধান শিক্ষক। পরে ঘটনাটি সে তার মা-বাবাকে জানালে তা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নির্যাতিত ছাত্রীর পরিবার অন্য ধর্মের হওয়ার কারণে পরে ঘটনাটি চেপে যায়।
ঘটনাটি জানাজানির পর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি ও ভয় দেখানো হয় পরিবারটিকে। নির্যাতিত ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘কী ঘটেছে বা হয়েছে, তা আমি বলতে চাই না। আমি বলব, কিছুই হয়নি। আমার অবুঝ মেয়েও কিছু বলবে না।’
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের এ অপকর্ম সানন্দবাড়ী বাজার এলাকার প্রতিটি মানুষ জানলেও জানে না শুধু উপজেলা শিক্ষা অফিস। এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে স্কুল কমিটি পরের দিন জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর বাড়িতে যান পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। কিন্তু নির্যাতিত পরিবারটি কোনো অভিযোগ করবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, ‘এলাকার মানুষ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘটনা প্রচার হওয়ার পর আমরা সব সদস্য বৈঠকে বসি। কিন্তু ওই ছাত্রীর বাবা জানিয়ে দেন, কোনো অভিযোগ নেই তাঁদের। কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ না করলে আমরা তো কিছু করতে পারি না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গেল রমজানে ওই প্রধান শিক্ষক তাঁর নিজের স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর নামে একেক দিন একেক ছাত্রীকে আলাদা কক্ষে নিয়ে যৌন হয়রানি করতেন। শিক্ষকের এ আচরণের পর ছাত্রীরা প্রাইভেট পড়া ও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিত। কিন্তু কোনো উপায় না পেয়ে কিছুদিন পর তারা আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করত।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে এলাকায়।’