লালমনিরহাট সদরের মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করানোর অভিযোগ ওঠেছে। প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক। এছাড়া অতিরিক্ত লেখাপড়ার নামে কোচিং করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে ফুলগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক লোকমান আলী ও হেলেনা আক্তার ছাড়া কোনো শিক্ষক স্কুলে আসেননি। তারা জানান, ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত স্কুলটিতে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩৯ জন। তার মধ্যে ৬৭ জন শিক্ষার্থীই পঞ্চম শ্রেণির। তাদের অনুমতি নিয়ে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসরুমে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা ঝাড়ু দিয়ে ক্লাসরুম পরিষ্কার করছে।
এসময় নিষিদ্ধ গাইড বই নিয়ে আলাপকালে শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘আমাদেরকে স্যার ইন্টারনেট প্রাথমিক সমাপনী স্পেশাল গাইড বই কিনতে বলেছেন। তাই আমরা সবাই ইন্টারনেট গাইড বই কিনেছি।’
এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অতিরিক্ত লেখাপড়া করানোর নামে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে পৌনে ৮টা পর্যন্ত এ কোচিং ক্লাস করানো হয়। মাস শেষে শিক্ষার্থীপ্রতি আদায় করা হয় ৩শ টাকা।
প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। তাই উচ্চমূল্যে গাইড বই কেনা ও মাসিক কোচিং ফি দেয়া অনেক অভিভাবকের পক্ষে কষ্টসাধ্য। তবুও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ কষ্ট স্বীকার করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘নিয়মিত কোচিং করানোর বিষয়ে কোনো কথা বললেই প্রধান শিক্ষক রেগে যান।’তবে গাইড বই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি। এসময় প্রতিবেদককে তার সঙ্গে দেখা করতেও বলেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘গাইড বই ব্যবহার করার কোনো বিধান নেই। শিক্ষার্থীদের গাইড বই ব্যবহার করার বিষয়ে যদি কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কোচিং করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্লাসের বাইরে অতিরিক্ত পড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে কেউ অর্থের বিনিময়ে স্কুলে কোচিং করালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’