প্রতিবন্ধী শিশুরা বরাবরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ স্নেহভাজন। নানাভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন দিবসে নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে যে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠান সেখানে স্থান পায় প্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা ছবি।
এবার প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে স্থান পেয়েছে ১২ প্রতিবন্ধী শিশুর আঁকা ছবি। ১২ প্রতিবন্ধী শিশুর ছবি নিয়ে ১২ ধরনের কার্ডে এবার ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার (৩ জুন) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তৈমুর ফারুক তুষার।
এদিকে যে সন্তানদের নিয়ে নানা বিড়ম্বনা, কষ্ট ভোগ করতে হয় সেই সন্তানদের ছবি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে স্থান পাওয়ায় আনন্দিত অভিভাবকরা। সন্তানদের এমন মূল্যায়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এবারে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কার্ডে যাদের ছবি স্থান পেয়েছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু আঁখি আক্তারের আঁকা একটি ছবি। ১৪ বছরের আঁখি মোহাম্মদপুরের হুমায়ন রোডের সীড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
রাজধানীর পশ্চিম মানিকদির এএসডি ও এডিএইচডি আক্রান্ত জিহাদুল ইসলাম শাফিনের একটি ছবিও স্থান পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্ডে। ৭ বছর বয়সী শাফিন প্রয়াস নামে একটি বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
কুমিল্লার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আল আমিন হাসানের ছবিও স্থান পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে। ২১ বছর বয়সী আল আমিন কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রয়াস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
১৪ বছর বয়সী ভোলার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ইযারুল ইসলামের ছবিও স্থান পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে। ইযারুল ভোলা’স চিল্ড্রেন প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, ভোলার শিক্ষার্থী।
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার কার্ডে আরো যাদের ছবি স্থান পেয়েছে, তারা হলেন- বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধীতায় আক্রান্ত ১৬ বছর বয়সী লালমনিরহাটের মুজাহিদুল ইসলাম মুন্না। তিনি লালমনিরহাটের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
রংপুরের অটিস্টিক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ১৩ বছরের মুহতাসিন দিহান। তিনি রংপুর সেনানিবাসের প্রয়াসের শিক্ষার্থী।
রাজধানীর হাজারীবাগের চবকঘাটার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ১১ বছরের রাইজুল ইসলাম রাব্বী। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সীডের শিক্ষার্থী।
সিরাজগঞ্জের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রাশেদুল হাসান। তিনি সিরাজগঞ্জের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
কুমিল্লার শারিরীক প্রতিবন্ধী ১০ বছরের রিয়াদ আদনান অপু।
বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধীতা রাজধানীর মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের শরীফ তাহসিন। তিনি মিরপুরের বি পি এফ এর কল্যাণী ইনক্লুসিভ স্কুল এর শিক্ষার্থী।
কলাবাগান লেক সার্কাসের অটিস্টিক শিশু শ্রেয়াস করণ। তিনি রাজধানীর শ্যামলীর সোয়াক স্কুল ফর অটিজমের শিক্ষার্থী।
রাজধানীর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার এএসডি আক্রান্ত সুবাহ সিদ্দিকী। তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্ডে স্থান পাওয়া শিশুদের ছবি বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন বলেন, দুই ভাবে ছবিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে প্রতিবন্ধী শিশুদের ছবি নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে যারা বিজয়ী হন সেখান থেকে ছবি আসে। আরেকটা হলো প্রতি জেলায় জেলা প্রশাসকদের আয়োজনে প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে বিজয়ীদের ছবিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসে। দুইভাবে আসা ছবিগুলোর মধ্যে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা কিছু ছবি বাছাই করে প্রধানমন্ত্রীকে দেন। সেগুলোর মধ্যে থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজে কার্ডের জন্য ছবি বাছাই করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে আশরাফুল আলম খোকন বলেন, আগে শিল্পীসমাজের কাছ থেকে ছবি আহ্বান করা হত। সেখান থেকে ছবি বাছাই করে কার্ড প্রকাশ হত। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে থেকে প্রতিবন্ধী শিশুদের ছবি দিয়ে কার্ড প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে সন্তানদের ছবি স্থান পাওয়ায় খুশি প্রতিবন্ধী শিশুদের অভিভাবকরা। সুবাহ সিদ্দিকীর মা রুবিনা নাহিদ সিদ্দিকী কাছেই জানলেন তার কন্যার ছবি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে স্থান পেয়েছে।
তিনি বলেন, এটি খুবই আনন্দের। আমরা খুশি। প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়। কিন্তু বাচ্চাদের এই ধরনের মূল্যায়ন হলে আমরা অনেকটা কষ্ট ভুলে যাই। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফলে অটিস্টিট বাচ্চাদের নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বদল হয়েছে। আগে তো আমরা বাচ্চাদের লুকিয়ে রাখতাম।
শিশু শ্রেয়াস করণের বাবা মিন্টু করণও কাছে জানলেন তার সন্তানের ছবি প্রধানমন্ত্রীর কার্ডে স্থান পেয়েছে।
আনন্দিত মিন্টু করণ বলেন, এটা একটা অন্য ধরনের আনন্দ। এই শিশুদের নিয়ে আমাদের অনেক কষ্টের মধ্যে যেতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের অনেক আনন্দিত করে।