দৈনিক শিক্ষায় ৮ এপ্রিল প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ‘করোনা মোকাবেলায় সহায়তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর এাণ তহবিলে একদিনের বেতন অনুদান দেবেন সব সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ, মাদারাসার শিক্ষকসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত অধিদপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা’। ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সব অফিস ও সরকারি ও বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে তার অফিস বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আগ্রহী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাসিক বেতন থেকে এক দিনের সমপরিমাণ টাকা অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের খোলা অ্যাকাউন্টে (হিসাব নম্বর: 0200009382600) হিসাবে জমা দিতে বলা হয়েছে। ৯ এপ্রিলের মধ্যে টাকা পাঠাতে হবে। [যা ০৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখে স্বাক্ষরিত]। আর শিক্ষক,কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের তালিকা ও টাকা জমা দেয়ার রশিদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট ই-মেইলে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে চিঠিতে। একইসাথে নির্ধারিত সময়ে টাকা জমা দিতে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে অনুরোধ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।’
এমতাবস্থায় আমি মনে করি মানবিক কারণে দেশের হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায়তায় সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একদিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা দিতে অবশ্যই আগ্রহী হবেন। কেননা, শিক্ষকরা অত্যন্ত মানবিক ও দায়িত্বশীল মানুষ। এটিই একজন গুণী শিক্ষকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাদের অনেকের সাধ্য সীমিত হলেও অসহায় মানুষের প্রতি সবাই সহানুভূতিশীল। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীই গত মাসে প্রাপ্ত বেতন-ভাতার টাকা ইতোমধ্যে সাংসারিক কাজে ব্যয় করে ফেলেছেন। বিশেষ করে যারা সরকারি অংশের বেতন-ভাতার উপর বেশিরভাগ নির্ভরশীল তাদের হাতে বাড়তি কোনো টাকাপয়সা এখন নেই।
এদিকে এমপিও আদেশ অনুসারে মার্চের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা আগামী ১২ এপ্রিলের পরে দেয়া হবে। এতদিন অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর পক্ষেই দৈনন্দিন ব্যয় চালানো খুব কষ্টকর। তদুপরি ০৯ এপ্রিলের মধ্যে ত্রাণ তহবিলে দেয়ার জন্য একদিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা ম্যানেজ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সকলের পক্ষে সম্ভব নয়।
অপরদিকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন অস্বাভাবিক ছুটি চলছে বিধায় শিক্ষক-কর্মচারীরা সহজে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তাই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পক্ষে এত সল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যেক আগ্রহী শিক্ষক-কর্মচারীর নিকট থেকে এই টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকে জমা করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্মতি থাকলেও সরকারি বেতন বিল থেকে সরাসরি টাকা নিয়ে নেয়ার বা রেখে দেয়ার কোনো সুযোগ প্রতিষ্ঠান প্রধানের হাতে নেই। শিক্ষক-কর্মচারীদের মার্চের বেতন-ভাতা ব্যাংকে জমা হওয়ার পর তারা ব্যাংক হিসাবের চেক দিলে বা টাকা তুলে এনে দিলে তখন প্রতিষ্ঠান প্রধান সেই টাকা ত্রাণ তহবিলে জমা করতে পারবেন।
তাছাড়া মাদরাসা ও কারিগরি অধিদপ্তর ৮ এপ্রিল সন্ধ্যা অব্দি একদিনের বেতন দেয়ার বিষয়ে আদেশই জারি করেনি।
এ সকল বাস্তব কারণেই এই টাকা জমা দেয়ার সময় কমপক্ষে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো উচিত। অন্যথায় বেতন থেকে বাধ্যতামূলকভাবে টাকা কেটে না নিয়ে বিশাল উদারতা দেখিয়েও অহেতুক সমালোচিত হবে সরকার। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের একদিনে আহরিত বেতনের সমপরিমাণ সহায়তার এই টাকাটা যদি কিছুদিন পরে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা হয় তো তেমন কোনো ক্ষতি হবে কি? নিশ্চয়ই না।
লেখক : মো. রহমত উল্লাহ, অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।