প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য পেলে তিলে তিলে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত লাইব্রেরিটি বিক্রি করবেন না সরকারি হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত বাংলা শিক্ষক গোকুল চন্দ্র দাশ। সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ৪ নং সড়কের নিজ বাসভবনে দৈনিক শিক্ষার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘লাইব্রেরিটির জন্য আমার অতিরিক্ত বাসাভাড়া দিতে হয়। বয়স হয়ে যাওয়ার একাকী রক্ষণাবেক্ষনও করতে পারি না। লোক নিয়োগ করা দরকার। এর জন্য যা খরচ হয় তা যদি রাষ্ট্র তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাই তাহলে আর লাাইব্রেরিটি বিক্রি করবো না।’
তাছাড়া রাষ্ট্রীয় সাহায্য পেলে ১৬ খণ্ডে বই আকারে প্রকাশ করবো ৪৭ বছর ধরে সংগ্রহ করা জাতীয় বাংলা দৈনিকের সব বিশেষ সংখ্যাগুলো। এতে যারা পিএইচডি, এমফিল বা অন্যান্য গবেষণা করবেন তারা উপকৃত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
১১ই অক্টোবর 'ব্যক্তিগত বাংলা লাইব্রেরি বিক্রি হবে' মর্মে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় একটি দৈনিক পত্রিকায়। দাম লেখা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। প্রায় ৫০ বছর ধরে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত লাইব্রেরির বই এবং পত্রিকার সংগ্রহ বিক্রি করার ঘোষণা দেন গোকুল দাশ। এরপর তার একজন প্রাক্তন ছাত্র লাইব্রেরি বিক্রি নিয়ে ফেসবুকে একটি ভুল স্টাটাস দেয়ায় নানাভাবে বিষয়টি আলোচনায় আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ওই শিক্ষার্থী ও বর্তমানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত ওই ব্যক্তি ফেসবুকে লেখেন, ‘স্যারের স্ত্রী ক্যান্সার আক্রান্ত। তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগাতেই ব্যক্তিগত সংগ্রহশালাটি বিক্রি করতে চান।’
দৈনিক শিক্ষার সাথে একান্ত আলাপকালে গোকুল চন্দ্র বলেন, ‘আমার স্ত্রী সুস্থ আছেন। অসুস্থতার খবরটি ফেসবুকে ছড়ানোয় টেলিফোনে অনেকের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলা বই সংগ্রহ করে চলেছেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক গোকুল চন্দ্র দাশ। টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকার তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাইস্কুলে। পরে মিরপুরের একটি স্কুলে যোগ দেয়ার কিছুদিনের মধ্যে স্কুলটি সরকারি হয়। এরপর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে প্রায় দুই দশক চাকরি করার পর অবসরে যান ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে। ছাত্রজীবনে এবং পেশাগত জীবনে লাইব্রেরি রক্ষণাবেক্ষণে তেমন সমস্যা না হলেও অবসর নেয়ার পর থেকেই লাইব্রেরির রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে তাঁর জন্য।
ষাটোর্ধ্ব এই শিক্ষক তার সারাজীবনের সংগ্রহ বিক্রি করে দিতে চাইছেন রক্ষণাবেক্ষন খরচ সামলাতে পারছেন না বলে। সেখানে তিনি 'বিনিময় মূল্য' ধরেছেন লাইব্রেরির জন্য ১৫ লাখ টাকা এবং পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার জন্য ১০ লাখ টাকা।
এই সংগ্রহশালা বিক্রি নিয়ে দৈনিক শিক্ষার সাথে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার সাবেক একজন ছাত্র আমাকে হেয় করার জন্য ফেসবুকে লেখেন যে, আমার স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোটাতে লাইব্রেরিটি বিক্রি করবো। আসল তা সত্য নয়।’
সারাজীবন সংগ্রহ করেন আত্মজীবনীমূলক এবং গবেষণাধর্মী দুই হাজারের বেশি বই। এছাড়াও বাংলা ভাষায় লেখা বিভিন্ন ধরণের বই রয়েছে তার কাছে।
গোকুল দাশ বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের অনেক গবেষকের পিএইচডি থিসিস রয়েছে আমার সংগ্রহে। বানান, বাগধারা, ইতিহাস, ভূগোলের মত নানান বিষয়ের দেড় শতাধিক অভিধানও রয়েছে।’
পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা
বিভিন্ন ধরণের বাংলা বই ছাড়াও বাংলাদেশে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা সংগ্রহ করছেন তিনি গত ৪৭ বছর ধরে।
‘১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পত্রিকা সংগ্রহ শুরু করি আমি। সেবছর যখন খেয়াল করি যে বিশেষ দিনে - যেমন ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ বা ১৬ই ডিসেম্বর - মূল পত্রিকার সাথে আলাদা একটি অংশ দেয়া হয় যেগুলোতে বিভিন্ন কবি এবং লেখকদের নানারকম লেখা থাকে।’
তিনি জানান, প্রথম পাঁচ-ছয় বছর বিশেষ দিবসগুলো উপলক্ষে প্রকাশিত পত্রিকার পুরোটাই সংগ্রহে রাখতেন তিনি। কিন্তু পরে শুধু ক্রোড়পত্র বা পত্রিকার সাথে প্রকাশিত বিশেষ অংশটি জমানো শুরু করেন।
ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত সকল কবিতার সংগ্রহশালা:
ক্রোড়পত্রগুলো এখন একটু অন্যভাবে সংরক্ষণ করছেন তিনি। সেখানে প্রকাশিত কবিতাগুলো আলাদা করে কেটে সংকলন করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, গত ৪৭ বছরে বিভিন্ন ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত কবিতাগুলো একসাথে সংকলন করে ১৬টি খণ্ডে ভাগ করেছেন।
"এই ১৬টি খণ্ড বই আকারে প্রকাশ করলে বাংলাদেশের পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় যাদের কবিতা ছাপা হয়েছে সেগুলো একসাথে পাওয়া যাবে।"
এছাড়াও এই ৪৭ বছরে পত্রিকায় যখনই কোনো সাহিত্যিক বা লেখকের সম্পর্কে কোনো লেখা ছাপা হয়েছে সেগুলোও আলাদা করে রেখেছেন তিনি।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমার সাবেক একজন ছাত্র বলেছেন, স্যার লাইব্রেরিটি বিক্রি করতে হবে না। আপনাকে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে দিচ্ছি।