প্রবাসে এক মেধাবী শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব - দৈনিকশিক্ষা

প্রবাসে এক মেধাবী শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আজ থেকে ২০ বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের মহা মেধাবী ছাত্র মঞ্জুর মোর্শেদ সম্পর্কে পত্রিকাতে লিখেছিলাম। সেই ছাত্রের মেধা, মানবিক গুণাবলি অনেক তরুণ–কিশোরকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আজ তাঁর ছেলে মুবাশ্বির মোর্শেদ রোহানকে নিয়ে লিখতে বসে বেশ আনন্দ অনুভব করছি। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, মঞ্জুর মোর্শেদ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষণা পরিচালক। কোনো পাবলিক পরীক্ষায় তিনি কখনো দ্বিতীয় হননি। তিনি ২৫ জন ছাত্রের ডক্টরাল প্রোগ্রামের সফল সুপারভাইজার। শুধু তা-ই নয়, শতাধিক বাংলাদেশি ছাত্রকে ডক্টরাল প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য নিজের পকেট থেকে ফি দিয়েছেন। পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের অনেক পড়ালেখা ও গবেষণা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের একজন অনুকরণীয় প্রতিনিধি হতে পরামর্শ দেন। এমন একজন ব্যক্তি তাঁর নিজের সন্তানদের যে পড়ালেখার অতিরিক্ত তাগিদ না দিয়ে সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন, এটাই স্বাভাবিক। ছেলে তাকে হতাশ করেনি, ক্রিকেট খেলা দেখা, দাবা খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আরও আনন্দের বিষয় হলো, রোহান বিজ্ঞানের গবেষণায়ও একনিষ্ঠ।

রোহানকে যখন প্রথম দেখি তখন তার বয়স পাঁচ-ছয় বছর হবে, অসম্ভব চঞ্চলমতি ছিল সেই সময়। এখন সে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের ট্রারাল্গানের লাভালা ক্যাথলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাসে প্যারাবোলা বিষয়টি তাকে আকর্ষণ করে। প্যারাবোলা হলো এমন একটি বক্ররেখা, যার প্রতিটি বিন্দু একটি নির্দিষ্ট সরলরেখা এবং একটি নির্দিষ্ট বিন্দু ফোকাস থেকে সমদূরবর্তী। দুই সপ্তাহ গবেষণা করে সে প্যারাবোলার ওপর একটি পেপার লিখেছে, যা অস্ট্রেলিয়ান ম্যাথমেটিক্স এডুকেশন জার্নালে কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে।

দুই সপ্তাহের গবেষণায় এমন সুপ্রাচীন বহু পঠিত, বহু গবেষণার একটি জ্যামিতিক আকারের জন্য সে অ্যালজেব্রা আর সামান্য ক্যালকুলাসের বিদ্যা দিয়ে এমন একটি সমীকরণ আবিষ্কার করেছে, যা দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে প্যারাবোলাই একমাত্র বক্ররেখা, যার একটি ফোকাস রয়েছে। সব আলোকরশ্মি এই ফোকাস বিন্দু দিয়ে যায় বলে রশ্মির তীব্রতা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া সম্ভব। আর্কিমিডিসের রোমানদের জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কল্পকাহিনিকে এই প্যারাবোলার ফোকাস দিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য করা যায়।

আমাদের দেশে যেমন একটি শিশুর প্রতিভার কথা হাজার গুণ বাড়িয়ে গিনেস বুকে নাম লিখিয়ে তার জীবনকে তছনছ করে দেয়া হয় (শুধু দেশেই নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ কাজ করে থাকে), অপ্রমাণিত ঘটনার অলীক বর্ণনাসংবলিত পাঠ্যপুস্তক পড়া শিশুদের স্বপ্ন যৌবনের দ্বারপ্রান্তে এসেই ভেঙে চুরমার করা হয়, সমাজের প্রতি সন্দেহ তৈরি করা হয়, পারপেচুয়াল মেশিনের সাড়া জাগানো আবিষ্কারের কথা, বিনা জ্বালানিতে গাড়ি চালানোর অলীক ভাবনা কিংবা এমনকি দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত গবেষকদের গবেষণা ফলাফল বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই করার আগেই রেডিও, টিভি, সংবাদপত্রে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হয়, কিন্তু মঞ্জুর সেই পথে হাঁটেননি। ছেলেটির পেপার যখন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের যাচাই-বাছাইয়ে জ্ঞান ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার প্রমাণ মিলেছে, তখনই এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে আমাকে জানিয়েছে।

জার্নালে রোহানের লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর ন্যাশনাল নাইন নিউজ ২০ সেপ্টেম্বর তাকে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছে (https://www.abc.net.au/news/2019-09-20/teenagers-parabola-equation-blows-away-maths-world/11519916. https://www.facebook.com/9NewsGippsland/ videos/2553119968088027/.)।

অল্প বয়সে এমন একটি আবিষ্কার নিশ্চয়ই রোহানকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করবে। আবিষ্কারের জন্য যে একাগ্রতা প্রয়োজন, রোহান ইতোমধ্যেই তা আত্মস্থ করেছে। আসলে প্রতিটি ছেলেমেয়ের উচিত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করা। মা–বাবাদেরও উচিত প্রচার–প্রসারের পেছনে সময় অপব্যয় না করে ছেলেমেয়েদের স্বাভাবিকভাবে গড়ে উঠতে দেওয়া, যেমনটি রোহানের ক্ষেত্রে হয়েছে। কোনো কৃত্রিম বর্ধনই শেষ বিচারে মঙ্গলজনক হয় না।

মোহাম্মদ কায়কোবাদ : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)–এর শিক্ষক ও ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076298713684082